পাকিস্তানের প্রস্তাবে ভারত নির্বিকার

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ছবি রয়টার্স

বন্ধ থাকা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আদৌ কি আন্তরিক? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ প্রশ্নই প্রাধান্য পাচ্ছে। সাক্ষাৎকার নিয়ে তড়িঘড়ি কোনো মন্তব্যে ভারত রাজি নয় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর। আলোচনা নিয়ে শরিফ আদৌ ‘আন্তরিক’ কি না, এবং তাঁর আগ্রহে সে দেশের ‘অন্যদের’ (সেনা ও আইএসআই) সায় আছে কি না, ভারত তা বুঝতে চাইছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের সঙ্গে ‘সব সমস্যা নিয়ে আন্তরিক আলোচনার’ প্রস্তাব দিলেও সেই আন্তরিকতার চরিত্র সম্পর্কে ভারত নিশ্চিত হতে পারছে না। কারণ, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে প্রচারিত এক বিবৃতি। দুবাইভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া শরিফের সাক্ষাৎকার নিয়ে ওই বিবৃতিতে যে ‘ব্যাখ্যা’ দেওয়া হয়েছে, তা ঘিরেই উঠে গেছে ‘আন্তরিকতার’ প্রশ্ন। ভারত মনে করছে, ওই বিবৃতি আসলে আলোচনায় বসার জন্য পাকিস্তানের ‘শর্ত’, যার সঙ্গে শরিফের সাক্ষাৎকারের ‘সুর’–এর অমিল প্রকট।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র বুধবার এই প্রসঙ্গে জানায়, শরিফের সাক্ষাৎকারের সুর আপাতদৃষ্টে আন্তরিক মনে হতে পারে। মনে হতে পারে তাঁরা যেন বন্ধ থাকা আলোচনা শুরু করতে খুবই আগ্রহী। না হলে তিনি ‘তিনটি যুদ্ধ থেকে শিক্ষা গ্রহণের’ কথা বলতেন না। ‘যুদ্ধ মানে সময় ও সম্পদ নষ্টের’ কথা বলতেন না। বলতেন না, ‘পাকিস্তান এখন শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচতে ও পুরোনো সমস্যার সমাধান চায়’। সূত্র বলে, ‘সাক্ষাৎকারে শরিফ কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলেছেন। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের কথা বলেছেন। ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গও টেনেছেন। কিন্তু সেগুলো আলোচনা শুরুর শর্ত হিসেবে খাড়া করেননি। অথচ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বিবৃতি পুরোটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব পুরোপুরি শর্তাধীন।’

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের মুখপাত্রের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরসহ সব পুরোনো দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব তিনি অবশ্যই দিয়েছেন; কিন্তু ওই সাক্ষাৎকারে বারবার বলেছেন, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট গৃহীত সিদ্ধান্ত (রাজ্য দ্বিখণ্ডিত ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ) পরিবর্তন না করলে আলোচনা সম্ভব নয়। বিবৃতিতে এ কথাও বলা হয়, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান সেখানকার জনগণের ইচ্ছা ও জাতিসংঘের প্রস্তাবের ভিত্তিতেই করতে হবে।

আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে বসানোর জন্য শাহবাজ শরিফ আমিরাতের শাসক মোহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেছেন। ভারতের চিরায়ত নীতি, কাশ্মীর সমস্যা ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় বিষয়। এখানে তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতার অবকাশ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একসময় মধ্যস্থ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ভারতের মনোভাব তখনো পরিবর্তিত ছিল।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের মতে, পাকিস্তানকে আগে ঠিক করতে হবে তারা কী চায়। ভারত বারবার বলে এসেছে, সন্ত্রাসবাদ জিইয়ে রেখে শান্তির আলোচনা হতে পারে না। ইসলামাবাদকে আগে সব জঙ্গি ঘাঁটি ভাঙতে হবে। অবকাঠামো নষ্ট করে দিতে হবে। আন্তসীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে সব ধরনের মদদ। তারপর আলোচনায় বসার মতো আন্তরিকতা দেখাতে হবে। সূত্রটির মতে, শাহবাজ শরিফের সাক্ষাৎকার ও পাকিস্তানের আবদুর রেহমান মাক্কিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আন্তর্জাতিক জঙ্গি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্পর্কযুক্ত কি না, তা–ও দেখা হচ্ছে।

শরিফের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পর জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, তাঁর আশা, দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধের কাজ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত এখন জি–২০ গোষ্ঠীর সভাপতি। এটাই উপযুক্ত সময়। তিনি বলেন, দুই প্রতিবেশী নিজেদের মধ্যে কথা না বললে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হবে না। সন্ত্রাসবাদেরও অবসান ঘটবে না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীও এ কথা মনে করতেন।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ২০১৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে বন্ধ। ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও ভারতে নিযুক্ত তৎকালীন পাকিস্তানের হাইকমিশনার আবদুল বাসিত কাশ্মীরের হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তার প্রতিবাদে তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ইসলামাবাদ সফর বাতিল করে দেন। সেই থেকে আজও দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা বন্ধ। আন্তসীমান্ত সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের মদদ পুরোপুরি বন্ধ না করলে আলোচনার টেবিলে বসতে ভারত নারাজ। ভারতের সরকারি অবস্থান, কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে আলোচনা করা যায় না।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন