সাংবাদিকদের চারিত্রিক সনদ নিয়ে বিতর্ক, বিপাকে বিজেপি

নরেন্দ্র মোদি
ফাইল ছবি

কথায় বলে ‘সাবধানের মার নেই।’ কিন্তু অতি সাবধানী হতে গিয়ে বিজেপিশাসিত হিমাচল প্রদেশের সরকার ও পুলিশকে পড়তে হলো প্রবল সমালোচনা ও বিড়ম্বনার মুখে। সর্বস্তরীয় প্রতিরোধের মুখে ছয় দিনের মাথায় রাজ্য প্রশাসনকে প্রত্যাহার করে নিতে হলো তাদের নোটিশ, যাতে সাংবাদিকদের চরিত্রের শংসাপত্র আনার হুকুম দেওয়া হয়েছিল।

হিমাচল প্রদেশে এ বছরের শেষে বিধানসভার ভোট। তার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেশ কয়েকটি কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। আজ বুধবার ৫ অক্টোবর, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে আসছেন। সরকারি অনুষ্ঠানের পর এক জনসভায় তাঁর ভাষণ দেওয়ার কথা। সেই জনসভার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের চারিত্রিক সনদ জমা দেওয়ার হুকুম জারি করেছিলেন রাজ্যের বিলাসপুর জেলার পুলিশ সুপার দিবাকর শর্মা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখের সেই নির্দেশে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর জনসভার খবর সংগ্রহ করতে ইচ্ছুক সব সাংবাদিককে ১ অক্টোবরের মধ্যে তাঁদের চরিত্রের সনদ জমা দিতে হবে। তার ভিত্তিতে পুলিশ সাংবাদিকদের জনসভার সংবাদ সংগ্রহ করার অনুমতি দেবে। নোটিশে বলা হয়েছিল, রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রিত দূরদর্শন ও অল ইন্ডিয়া রেডিও সাংবাদিকদেরও ওই সনদ জমা দিতে হবে।

ওই নোটিশ সব মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করে। রাজ্যের সাংবাদিকদের পাশাপাশি রাজ্যের বাইরের সাংবাদিকেরাও সামাজিক মাধ্যমে ওই নোটিশের প্রবল সমালোচনা শুরু করেন। রাজ্যের সাংবাদিক মনজিৎ সেহগল এক টুইটে এ হুকুম জারি প্রসঙ্গে লেখেন, ‘ওরা এখন সরকার নিবন্ধিত সাংবাদিকদেরও সন্দেহ করতে শুরু করেছে! কোথায় যাব আমরা?’ প্রধানমন্ত্রী মোদি, বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা, মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর, হিমাচল পুলিশকে ট্যাগ করে ওই টুইটের মতো বহু টুইট ছড়িয়ে পড়ে। বিশিষ্ট সাংবাদিক মৃণাল পান্ডে টুইটে লেখেন, ‘ভোটের আগে হিমাচল সরকার এখন সব সাংবাদিকের চারিত্রিক সনদ দাবি করছে!’ সর্বস্তরীয় এ প্রতিরোধের মুখে হিমাচল প্রদেশ পুলিশের মহাপরিচালক সঞ্জয় কুন্ডু গতকাল মঙ্গলবার ওই নোটিশ প্রত্যাহার করে নেন। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভার সংবাদ সংগ্রহ করার অধিকার সব সাংবাদিকের রয়েছে। সাংবাদিকেরা যাতে তাঁদের কাজ নির্বিঘ্নে করতে পারেন, রাজ্য পুলিশ সে জন্য সব রকমের সহযোগিতা করবে।

রাজধানী দিল্লির প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি উমাকান্ত লাখেরা এ প্রসঙ্গে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ঘোষিত জরুরি অবস্থার সময়েও এমন ধরনের ভাবনা শাসকের মাথায় আসেনি। দেশে এখন অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে। কোভিডের দোহাই দিয়ে এখনো সব শ্রেণির সাংবাদিকদের সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকার নিবন্ধিত সাংবাদিকদের সংখ্যা কমাতে নানা কড়াকড়ি করা হচ্ছে। এই সরকার শুধু সেই সাংবাদিকদেরই চায়, যারা বিনা প্রশ্নে আনুগত্য প্রদর্শন করবে।’ লাখেরা বলেন, ‘হিমাচল প্রদেশ সরকার নিশ্চিতভাবে ওপর মহলের নির্দেশে ওই নির্দেশিকা জারি করেছিল। শাসক বিজেপি দেখতে চেয়েছিল প্রতিক্রিয়া কেমন হয়।’

প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সম্পাদক সঞ্জয় কাপুর মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ নির্দেশ অচিন্তনীয়। এমন কখনো ঘটেনি। বোঝাই যায়, গণমাধ্যমকে সরকার কোন চোখে দেখে। শত্রু ভাবে বলেই এমন নির্দেশ।’

জম্মু–কাশ্মীরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সফরের জন্য জম্মু–কাশ্মীরের জম্মু ও রাজৌরি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার রাতে শাহ দুদিনের সফরে জম্মু পৌঁছেছেন। তাঁর সফর শুরুর কিছু সময় আগেই এই কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের কারারক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক হেমন্ত কুমার লোহিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁকে খুনের দায় নিয়েছে লস্কর–ই–তাইয়েবার ভারতীয় শাখা ‘পিপলস অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট ফোর্স’ বা পিএএফএফ। লোহিয়াকে খুনের অভিযোগে মঙ্গলবার তাঁর পরিচারক ইয়াসের আহমেদকে আটক করা হয়েছে। শাহ কাশ্মীর উপত্যকার বারামুলাতেও এক জনসভায় আজ বুধবার ভাষণ দেবেন। সেখানেও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হবে। রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতেই এ সাবধানতা।

মঙ্গলবার শাহ এ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মানুষের শিক্ষাক্ষেত্র ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তফসিল উপজাতি হিসেবে তাঁরা এ সংরক্ষণের সুবিধা ভোগ করবেন। বিজেপি মনে করছে, এর ফলে তারা পরবর্তী ভোটে পাহাড়িদের সমর্থন পাবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন