আদানি ইস্যুতে টানা সাত কর্মদিবস অচল ভারতের সংসদ

রাহুল গান্ধী
ছবি: এএনআই

টানা সাত কর্মদিবস ভারতীয় সংসদ অচল হয়ে রইল। গত সপ্তাহের পুরোটা এবং এই সপ্তাহের প্রথম দুই দিন লোকসভা ও রাজ্যসভায় কোনো কাজ হলো না। চলতি সপ্তাহের বাকি তিন দিনেও সংসদ সচল হবে কি না, সন্দেহ। কারণ, আজ মঙ্গলবার লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে যুযুধান দুই শিবির নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে রাজি হয়নি।

সরকার পক্ষ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে যেমন অনড়, বিরোধীরা তেমনই রাহুলকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া ও আদানিকাণ্ডের তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠনের দাবিতে অটল। এই পরিস্থিতিতে জম্মু-কাশ্মীরের বাজেট, কেন্দ্রীয় বাজেটসহ অর্থ বিল কবে পাস হবে, তা অনিশ্চিত। সংসদের বাজেট অধিবেশনের মেয়াদ শেষ হবে ৭ এপ্রিল।

আজ মঙ্গলবার ওম বিড়লার ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা অভিযোগ করে, সরকার পক্ষ আদানি প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে চায় না বলেই অহেতুক রাহুলের ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছে। তাদের দাবি, রাহুল সরকারের সমালোচনা করেছেন। সরকারের সমালোচনা দেশের নিন্দা নয়। তা ছাড়া তিনি দেশের সমস্যার সুরাহায় বিদেশের হস্তক্ষেপও দাবি করেননি; বরং বলেছেন, সমস্যার সমাধান দেশকেই করতে হবে।

বিরোধীদের অভিযোগ, আদানি প্রসঙ্গ এড়াতেই সরকার পক্ষ এই অসত্য অভিযোগ এনে সংসদ অচল করে রেখেছে।

সরকারের পক্ষে পীযূষ গোয়েল বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে বলেন, সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি স্পিকারকে বলেন, তাঁর অনুরোধ মেনে সরকার সহযোগিতায় রাজি। কিন্তু বিরোধীরা কোনো শর্তেই পিছু হটতে প্রস্তুত নয়। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের ডাকা বৈঠকে কংগ্রেস উপস্থিতই হয়নি।

মঙ্গলবার সংসদের দুই কক্ষের অধিবেশন মুলতবি হয়ে গেলে সংসদ ভবনের দোতলায় বিরোধীরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে আদানি তদন্তে জেপিসির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে এভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন এই প্রথম। দোতলার অলিন্দ থেকে বিশাল ব্যানার তাঁরা ঝুলিয়ে দেন, যাতে জেপিসি গঠনের দাবি লেখা ছিল। বিরোধীরা বিক্ষোভ দেখান সংসদ ভবনে থাকা স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার শাখার সামনে, যে শাখায় সাংসদদের প্রত্যেকের নামে খাতা খোলা থাকে এবং যেখান থেকে তাঁরা বেতন ও ভাতার টাকা গ্রহণ করেন।

স্টেট ব্যাংক আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে লগ্নি করেছে। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্টেট ব্যাংক ও জীবন বিমা করপোরেশন (এলআইসি) আদানি গোষ্ঠীতে লগ্নি করে লোকসানের মুখে। জেপিসি গঠনের দাবি মোদি-আদানি যোগসাজশের তদন্তের জন্য।

আদানিকাণ্ড নিয়ে একটি শব্দ ব্যয় না করে বিজেপি ও সরকার রাহুলের ক্ষমার দাবিতে সরব। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র মঙ্গলবার রাহুলকে ‘এ যুগের মীর জাফর’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, মীর জাফর নবাব হওয়ার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহায্য চেয়েছিলেন। রাহুল গান্ধীও নেতা হওয়ার বাসনায় লন্ডন গিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য ইউরোপ ও আমেরিকার মতো গণতন্ত্রের তথাকথিত রক্ষকদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।