‘কর্ণাটকে আসলে পরাজয় হয়েছে মোদির’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ছবি: এএনআই

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে কংগ্রেসের বিপুল জয় আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরাজয়। আজ শনিবার জয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা জয়–পরাজয়কে এভাবেই ব্যাখ্যা করলেন। বিস্ময় এই, বিকেল পর্যন্ত বিজেপির কোনো বড় নেতা এই নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না।

কর্ণাটকে এবার বিজেপির হারকে ‘মোদির পরাজয়’ বলে সরাসরি চিহ্নিত করার যথেষ্ট কারণও আছে। নির্বাচন ঘোষণার আগে থেকে প্রচার শেষ হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বারবার ওই রাজ্যে গেছেন। শেষ সাত দিনে ২১টি জনসভা করেছেন, রোড শো করেছেন চারটি। পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, কাট আউটে স্রেফ তাঁরই মুখ প্রাধান্য পেয়েছে। শুধু তা–ই নয়, শীর্ষ নেতারা পর্যন্ত জনসভায় প্রার্থীদের উপস্থিতি সত্ত্বেও মোদির নামে ভোট চেয়েছেন। জনতাকে বলেছেন, তাঁরা যেন প্রতিটি ভোট মোদিকে দেন। এমন ‘মোদিময়’ প্রচার সত্ত্বেও এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ার পর স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেস নেতারা এই ফল ‘মোদির পরাজয়’ বলে বর্ণনা করছেন। বিজেপি নির্বাক।

পরাজয় নিশ্চিত বোঝার পর হার মেনে মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই শনিবার যা বলেন, তাতেও প্রকারান্তরে তিনি মোদিকেও দায়ী করেছেন। বোম্মাই বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বিজেপি কর্মীদের প্রবল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা দাগ কাটতে পারিনি। কংগ্রেস পেরেছে। ফল পুরো প্রকাশ পেলে আমরা বিশ্লেষণে বসব। খামতি দূর করার চেষ্টা করব।’

এই নির্বাচনে দলের পরাজয় হলেও বাসবরাজ নিজে ১ লাখ ১৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাক হলেও কংগ্রেস সরাসরি এই পরাজয়কে মোদির হার বলেছে। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। জেতার জন্য সবকিছু করেছেন। তাঁকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। অথচ হেরে গেলেন। এই পরাজয় তাই মোদিরই হার।’

বাঘেল বলেন, ‘হার অবধারিত বিজেপি বুঝতে পেরেছিল। সে জন্য শেষ মুহূর্তে খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনে তারা মোদির বদলে সভাপতি জে পি নাড্ডার ছবি ছাপায়।’

কর্ণাটকে কংগ্রেসের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও একে প্রধানমন্ত্রীর হার বললেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অন্তত ২০ বার কর্ণাটক সফর করেছেন। অতীতে কখনো কোনো প্রধানমন্ত্রী বিধানসভার ভোটের আগে এভাবে এ রাজ্যে প্রচারে আসেননি। এই হার তাঁরই হার। তাঁর সঙ্গেই দলের সভাপতি জে পি নাড্ডা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেরও।’

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতা এআইসিসির কর্মকর্তা বি কে হরিপ্রসাদ। ফল নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘মোদি কি ভগবান? অমিত শাহই–বা কে? কী করে তিনি বলেন, কর্ণাটকবাসী মোদিকে ভোট না দিলে এই রাজ্য তাঁর আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে? কেন বলেন, এই রাজ্যে কোনো কেন্দ্রীয় প্রকল্প আসবে না?’

হরিপ্রসাদ বলেন, ‘কর্ণাটক দেশের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। তৃতীয় সেরা করদাতা রাজ্য। কর্ণাটক কোনো দিক থেকেই উত্তর প্রদেশ বা বিহার নয়।’

মোদিকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশও। জয় নিশ্চিত হওয়ার আগেই তিনি টুইট করে বলেন, ‘এখন এটা নিশ্চিত, কংগ্রেস জিতেছে। হারলেন মোদি। বিজেপি এই ভোটকে মোদির নামে গণভোটে পরিণত করেছিল। বলেছিল, মোদির আশীর্বাদ পেতে তাঁকেই ভোট দিতে হবে। কর্ণাটকের মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।’

জয়রাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিভেদের রাজনীতি করতে চেয়েছেন। মেরুকরণের রাজনীতি করেছেন। কংগ্রেসের নেতৃত্বে এই রাজ্য এবার সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রগতির পথে এগিয়ে যাবে।’

কর্ণাটকে পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি দাক্ষিণাত্যের একমাত্র বড় রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ হারাল। দক্ষিণের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পদুচেরিতে বিজেপি রয়েছে শাসক দল এন আর কংগ্রেসের ছোট শরিক হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’ গঠনের কথা বলেছেন। অথচ বিজেপিকে হারিয়ে হিমাচল প্রদেশ দখলের পর কংগ্রেস এবার কর্ণাটক দখল করে দক্ষিণ ভারতকে ‘বিজেপিমুক্ত’ করে দিল। কংগ্রেসের সভাপতিত্ব গ্রহণের পর মল্লিকার্জুন খাড়গের এটি দ্বিতীয় জয়। হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেস জেতে নতুন সভাপতির আমলেই।

আরও পড়ুন