মণিপুরে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হলে সহিংসতা চলবে: ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান

মণিপুরে সহিংসতা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ। ৩ নভেম্বর, দিল্লিছবি: এএনআই

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের (ইস্টার্ন কমান্ড) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রানা প্রতাপ কলিতা বলেছেন, মণিপুরে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সহিংসতা শুরুর পরে নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় হাজারের বেশি অস্ত্র লুট করা হয়েছে। এর মধ্যে দেড় হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও সাড়ে চার হাজারের বেশি অস্ত্র এখনো বাইরে রয়ে গেছে।

পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান কলিতা গতকাল মঙ্গলবার আসামের গুয়াহাটি প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি স্পষ্টই বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র যত দিন বাইরে থেকে যাবে, তত দিন বিক্ষিপ্ত সহিংসতা চলতেই থাকবে।

মণিপুরে বসবাসকারী তিনটি সম্প্রদায় কুকি, মেইতেই ও নাগাদের মধ্যে কিছু পুরোনো সমস্যা রয়েছে, যে কারণে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার সাড়ে ছয় মাসের বেশি পরেও রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি বলে মন্তব্য করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল কলিতা। তিনি বলেন, উভয় সম্প্রদায়ের (আদিবাসী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই) মধ্যে পুরোপুরি মেরুকরণ হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি এখনো স্পর্শকাতর। অবশ্য সহিংসতার মাত্রা কমেছে।

গত মে মাস থেকে চলা জাতিগত সংঘর্ষে মণিপুরে ১৭৫ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

জেনারেল কলিতা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব ছিল সংঘর্ষের কারণে বাস্তুচ্যুত লোকদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালানো। পরে আমরা সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আমাদের যাবতীয় শক্তি নিয়োগ করি। কিন্তু কুকি ও মেইতেইদের মধ্যে মেরুকরণের কারণে কিছু বিক্ষিপ্ত সহিংসতা চলছে।’

কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষকে রাজনৈতিক সমস্যা উল্লেখ করে কলিতা বলেন, গত শতকের নব্বইয়ের দশকে কুকি ও নাগাদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান জরুরি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে না করে আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে করলেন ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।  

ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গেছে বলে মন্তব্য করে কলিতা বলেন, বাইরে থেকে অস্ত্র আসছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, তা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ, মণিপুরেই যথেষ্ট অস্ত্র রয়ে গেছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, সাড়ে চার হাজার অস্ত্র সমাজের মধ্যে থাকা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

মিয়ানমার থেকে শরণার্থীর প্রবেশ

প্রতিবেশী মিয়ানমারে অস্থিরতার কারণে মিয়ানমার থেকে ভারতে প্রবেশ করা শরণার্থীদের প্রশ্নে জেনারেল কলিতা বলেন, ভারত আশ্রয়প্রার্থী নিরস্ত্র মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছে। বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সশস্ত্র ক্যাডার ও মাদক পাচারকারীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের সমস্যা অত্যন্ত কঠিন। ভৌগোলিক ও উন্নয়নের অভাব—এই দুই কারণে সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে।

কলিতা বলেন, মনে রাখতে হবে, সীমান্তের উভয় পাশে একই জাতিসত্তার মানুষ রয়েছেন। ফলে সীমান্তে অবাধ চলাচল রয়েছে। এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই কারা ভারতীয় এবং কারা মিয়ানমারের নাগরিক—তা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষে চিহ্নিত করা কঠিন।

মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের প্রসঙ্গে জেনারেল কলিতা আরও বলেন, তাঁদের যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা খুব পরিষ্কার। কোনো মিয়ানমারবিরোধী সশস্ত্র ক্যাডারকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কোনো সশস্ত্র ক্যাডার আসার চেষ্টা করলে যথাযথভাবে তার মোকাবিলা করা হবে। মাদক ও অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। কেউ ধরা পড়লে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।