করোনার লকডাউনে প্রেমের পর বিয়ে, তিন খুনে সমাপ্তি
করোনার লকডাউনের সময় গড়ে ওঠা এক প্রেমের করুণ পরিসমাপ্তিতে ঘটল ভারতের আসামে। গত সোমবার রাজ্যের গোলাঘাট জেলায় নাজিবুর তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে হত্যা করে পুলিশের কাছে ধরা দেন। কোলে তখন তাঁর ৯ মাসের সন্তান।
২০২০ সালের জুন মাস। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি। প্রায় পুরো বিশ্বের মানুষ তখন ঘরবন্দী। ঘরবন্দী মানুষের তখন বেশির ভাগ সময় কাটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যন্ত্রপ্রকৌশলী ২৫ বছরের নাজিবুর রহমান বোরার ফেসবুকে পরিচয় হয় তাঁর চেয়ে এক বছরের ছোট সংঘমিত্রা ঘোষের সঙ্গে। ফেসবুকে সংঘমিত্রা ঘোষ (২৪) নামে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয় যন্ত্রপ্রকৌশলী নাজিবুর রহমানের (২৫)।
কয়েক মাসের মধ্যে দুজনের সম্পর্ক বন্ধুত্ব থেকে প্রেমে রূপ নেয়। ওই বছরের অক্টোবরে দুজনেই ঘর ছেড়ে কলকাতায় পাড়ি জমান।
পুলিশের ভাষ্য, এরপর সংঘমিত্রার মা-বাবা মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু তত দিনে নাজিবুর ও সংঘমিত্রার বিয়ে হয়ে গেছে। তাঁরা বিয়ে করেছেন আদালতে।
পরের বছর সংঘমিত্রার বাবা-মা সঞ্জীব ঘোষ ও জুনু ঘোষ পুলিশের কাছে মেয়ের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় সংঘমিত্রাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এক মাসের বেশি সময় তাঁকে বিচারিক হেফাজতে থাকতে হয়। জামিন পাওয়ার পর সংঘমিত্রা বাবা-মায়ের বাড়িতে ফিরে যান।
কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নাজিবুর ও সংঘমিত্রা আবার পালিয়ে যান। এবার তাঁরা যান চেন্নাইয়ে। সেখানে তাঁরা পাঁচ মাস ছিলেন। আগস্টে আসামের গোলাঘাটে যখন তাঁরা ফিরে আসেন, তখন সংঘমিত্রা অন্তঃসত্ত্বা। নাজিবুরের বাড়িতে তাঁরা থাকতে শুরু করেন। নভেম্বরে এই দম্পতির ঘরে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।
এর চার মাস পর চলতি বছরের মার্চে সংঘমিত্রা তাঁর ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সংঘমিত্রার অভিযোগ, নাজিবুর তাঁকে নির্যাতন করেন। তাই তিনি পুলিশের কাছে এ নিয়ে অভিযোগও করেছেন। হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা ওই মামলায় নাজিবুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৮ দিন পর জামিনে মুক্তি পান তিনি।
জেল থেকে বেরিয়ে নাজিবুর তাঁর সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু সংঘমিত্রার পরিবার সে সুযোগ দেয়নি। গত ২৯ এপ্রিল নাজিবুরের ভাই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, সংঘমিত্রা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নাজিবুরকে মারধর করেছেন।
গত সোমবার দুই পক্ষের মধ্যে অশান্তি চরম আকার ধারণ করে। নাজিবুর তাঁর স্ত্রী সংঘমিত্রা ও শ্বশুর-শাশুড়িকে হত্যা করেন। এরপর ৯ মাসের সন্তানকে নিয়ে পালান। পরে তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
সংঘমিত্রার বাড়িতে তখন ছুরিকাঘাতে নিথর মরদেহগুলো থেকে রক্তের বন্যা বইছে।
আসাম পুলিশ প্রধান জিপি সিং এ ঘটনায় টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যা ও বাড়িতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার রাজ্য সিআইডি দলকে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, ফরেনসিক দলকে ডাকা হয়েছে।