আক্রমণাত্মক ভাষণ: মোদির নাম নেওয়ার সাহস দেখাতে পারল না নির্বাচন কমিশন

নরেন্দ্র মোদিছবি: এএনআই

আপত্তি জানিয়ে অভিযোগ দাখিল হয়েছিল প্রথম দফার ভোটের পরেই। অথচ এক মাস পর ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে দাওয়াই দিল, তাতে না আছে প্রধানমন্ত্রীর নামের উল্লেখ, না আছে সাহস ও দৃঢ়তার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া। বিজেপি ও কংগ্রেসের তারকা নেতারা যাতে ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও ভাষার ভিত্তিতে প্রচার না চালান, দলের সভাপতিদের শুধু সেই সতর্কবার্তা জানিয়ে দায় সারল ইসি।

গতকাল বুধবার বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে ওই নির্দেশ দিয়ে ইসি বলেছে, বাকি দুই পর্বের ভোট প্রচারে তারকা প্রচারকেরা যাতে কথাবার্তায় সংযম থাকেন, তা তাঁদের নিশ্চিত করতে হবে। বিরোধীদের আক্রমণের সময় শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। দলীয় সভাপতিদের সেই নির্দেশ জারি করতে হবে।

প্রথম দফার ভোটের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারের উল্লেখ করে বলেছিলেন, ওই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় এলে তারা সাধারণ মানুষের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে ‘যারা কাঁড়ি কাঁড়ি বাচ্চার জন্ম দেয়’ ও ‘অনুপ্রবেশকারী’, তাদের বিলিয়ে দেবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এক ভাষণের উল্লেখ করে মোদি আরও বলেছিলেন, মনমোহন সিং জানিয়েছিলেন, দেশের সম্পদের ওপর মুসলমানদের অধিকার সবার আগে। জনতার উদ্দেশে মোদির প্রশ্ন ছিল, এই কাজ তাঁরা বরদাশত করবেন কি? তাঁদের সম্পদ মুসলমানদের বাঁটোয়ারা করতে দেবেন কি?

কংগ্রেস সঙ্গে সঙ্গেই ওই ভাষণের প্রতিবাদ জানিয়ে ইসিকে চিঠি দিয়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক। একই সময়ে বিজেপিও আপত্তি জানিয়েছিল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর দেওয়া এক ভাষণের। দীর্ঘ দুই সপ্তাহ পর সক্রিয় হলেও মোদি বা রাহুলকে নোটিশ না পাঠিয়ে ইসি চিঠি দেয় দুই দলের সভাপতিকে। দুই সভাপতির কেউই অভিযোগ স্বীকার করেননি। উত্তর পাওয়ার পর এক মাসের মাথায় ইসি তার মনোভাব জানাল, যা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে নিতান্তই নির্বিষ ও দায়সারা।

ইসি সেই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর নাম পর্যন্ত উল্লেখ করার সাহস দেখাতে পারেনি ইসি। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদির ভাষণ ছিল পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক। আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী। কিন্তু নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে রা কাড়ার সাহসটুকু কমিশন দেখাতে পারেনি। বরং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাহুলকেও তারা জুড়ে দিয়েছে ইচ্ছে করে।

কমিশন জানিয়েছে, তারকা প্রচারকদের বক্তৃতার মান আশানুরূপ নয়। তাঁদের ভাষণে একাধিকবার ধর্মীয় ও জাতিগত মন্তব্য শোনা গেছে, যা অনভিপ্রেত। চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কমিশনের। সেটা যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য দলের সভাপতিদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কংগ্রেস সভাপতি খাড়গেকে বলা হয়েছে, তারকা নেতারা যেন ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প বা দেশের প্রতিরক্ষা নিয়ে কিছু না বলেন। এমন কথা যেন না বলেন, বিজেপি আবার ক্ষমতায় এলে দেশের সংবিধান তারা ধ্বংস করে দেবে।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনায় বিরোধীরা সরব। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ বলেন, দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে শাসক দলের সুবিধা কীভাবে করা যায়, কমিশন তা দেখিয়ে দিল। মোদি ও শাহর কুমন্তব্য আড়াল করতে তারা রাহুল গান্ধীর ভাষণ টেনে এনেছে।

মোদি–শাহ যেখানে সরাসরি হিন্দু–মুসলমান করছেন, রাহুল সেখানে দুর্বলদের সংরক্ষণ রক্ষার কথা বলছেন। কোনোভাবেই তা জাতিগত প্রচার হতে পারে না। গুরুতর প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ায় কমিশনের সমালোচনা করেছেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিও। তিনি বলেন, ইসির ভূমিকা বালখিল্য ন্যায়। বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

গত ১০ বছরে মোদি ও শাহর বিরুদ্ধে বহুবার সাম্প্রদায়িক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ধর্মের আধারে ভোট চাওয়ার অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন একবারও কোনো ‘অপরাধ’ দেখতে পায়নি। আগেও না, এবারও নয়।