কংগ্রেসের নতুন ‘ক্যাপ্টেন’ খাড়গে, শুধু টস করবেন না ফিল্ডও সাজাবেন

সভাপতি পদে লড়েছেন প্রবীণ নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ও শশী থারুর
ছবি: এএনআই

উপমহাদেশের অন্যতম পুরোনো রাজনৈতিক দল ভারতীয় কংগ্রেসের নতুন সভাপতি হয়েছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী শশী থারুরকে বড় ব্যবধানেই হারিয়েছেন তিনি। আজ বুধবার দিল্লিতে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচিত নতুন সভাপতির নাম ঘোষণার পরই প্রায় দুই দশক পর গান্ধী পরিবারের বাইরে সভাপতি পেল দলটি। আর কংগ্রেসের দীর্ঘ ১৩০ বছরের ইতিহাসে তিনি দলিত নেতা হিসেবে এই পদে আসীন হলেন।

নির্বাচনে হার মেনে নিয়ে মল্লিকার্জুন খাড়গেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন শশী থারুর। বিবৃতিতে শশী থারুর বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আজ থেকে দলের পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া শুরু হলো।’
এদিকে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের পরই দেশটির গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে কংগ্রেস সভাপতি হলেন খাড়গে, ‘ক্যাপ্টেন’ কি শুধু টসে যাবেন নাকি ফিল্ডও সাজাবেন?

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ নতুন ‘অধিনায়ক’ হিসেবে মল্লিকার্জুন খাড়গেকে বেছে নিল কংগ্রেস। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং তার আগে একাধিক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে লড়াই করতে হবে খাড়গের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসকে। প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ডেলিগেটের ভোটের মধ্যে ৭ হাজারের বেশি ভোট যায় খাড়গের ঝুলিতে। প্রতিদ্বন্দ্বী শশী থারুর পান মাত্র ১০৭২ ভোট।

১৩০ বছরের বেশি সময়ের দলটির ইতিহাসে আজ পর্যন্ত ৪১ জন সভাপতি হয়েছেন। মল্লিকার্জুন খাড়গে তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় দলিত হিসেবে দলের সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন। এর আগে ২০০০ সালে শেষবার নির্বাচন হয়েছিল। সেবার জীতেন্দ্র প্রসাদকে হারিয়ে সভাপতি হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী। এর পর থেকে পরবর্তী দুই দশকের বেশি সময় ধরে কংগ্রেস সভাপতি থেকেছেন কোনো এক গান্ধী। তবে ২০২২ সালে শেষমেশ সেই ধারাবাহিকতা ভাঙল।

এদিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও কংগ্রেসের রাশ গান্ধীর হাতেই থাকবে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। গান্ধীদের সঙ্গে নিয়েই নতুন সভাপতিকে দল পরিচালনার কাজ করতে হবে এই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন খাড়গে। নিজেকে গান্ধীদের ‘রিমোট কন্ট্রোল’ বলতে নারাজ হলেও দল এবং দেশে গান্ধীদের ভূমিকা নিয়ে সরব থেকেছেন খাড়গে। এদিকে নিজের হার মেনে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী খাড়গেকে নির্বাচনে জয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শশী থারুর।

এদিকে আজ নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগেই মল্লিকার্জুন খাড়গেকে দলের সভাপতি বানিয়ে দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। আজ কংগ্রেসে তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমার ভূমিকা নির্ধারণ করবেন কংগ্রেস সভাপতি…খাড়গেজিকে জিজ্ঞাসা করুন।’ উল্লেখ্য, রাহুল যখন এ মন্তব্য করেছিলেন, তখনো কংগ্রেস সভাপতি পদের নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়নি।

আজ থেকে দল পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া শুরু: থারুর

আজ ভোট গণনায় ফলাফল স্পষ্ট হতেই নতনু সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাড়িতে পৌঁছে যান শশী থারুর। এর আগে শশী থারুর টুইটে লেখেন, ‘সর্বভারতীয় কংগ্রেস দলের সভাপতি হওয়া একটি মহান সম্মান এবং একটি বিশাল দায়িত্ব। আমি সেই কাজে খাড়গেজির সাফল্য কামনা করি। এক হাজারের বেশি সহকর্মীর সমর্থন পাওয়ায় এবং ভারতজুড়ে কংগ্রেসের এত শুভাকাঙ্ক্ষীর আশা-আকাঙ্ক্ষা বহন করার বিষয়টি আমার জন্য সৌভাগ্যের ছিল।’

এদিকে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে অবশ্য নানা অভিযোগ উঠেছিল শশী থারুরের শিবিরের পক্ষ থেকে। অভিযোগ করা হয়, কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে। এ বিষয়ে কংগ্রেসের সভাপতি প্রার্থী শশী থারুরের নির্বাচনের এজেন্ট সালমন সোজ বলেন, ‘আমরা মধুসূদন মিস্ত্রির অফিসের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করে চলেছি। তাদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেছি। এখনই এর সুনির্দিষ্ট বিষয়ে যেতে পারছি না।’ পরে জানা যায়, উত্তর প্রদেশের সব ডেলিগেটের ভোট বাতিল করার দাবি তুলেছিলেন শশী থারুরের শিবিরের নেতারা। পাশাপাশি মল্লিকার্জুন খাড়গে শিবিরের বিরুদ্ধে ভোট গণনায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ তুলেছিল থারুরের শিবির। শশী শিবিরের দাবি, খাড়গের ঘনিষ্ঠ বহু নেতা বেআইনিভাবে গণনা কেন্দ্রে ছিলেন।