মুসলমান মেয়ের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮-তে বেঁধে দেওয়ার আরজি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছে দেশটির জাতীয় মহিলা কমিশন। গত শুক্রবার কমিশনের পক্ষে এ বিষয়ে এক জনস্বার্থ মামলার আবেদন সর্বোচ্চ আদালত গ্রহণ করেছেন।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি পি এস নরসিংহের এজলাস মামলাটি গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছেন। কেন্দ্রকে মতামত জানানোর জন্য চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।
ভারতে বিবাহযোগ্য নারীর ন্যূনতম বয়স এখন ১৮, পুরুষদের জন্য ২১। মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই বয়স আলাদা। এই ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী, মেয়েরা ঋতুমতী হলে কিংবা বয়স ১৫ হলেই তাকে বিয়ের যোগ্য মনে করা হয়। আবেদনকারীর বক্তব্য, ওই বয়স সন্তান উৎপাদনে সহায়ক হলেও শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে নারী ও শিশুর পক্ষে উপযুক্ত নয়। তাই মুসলমান নারীর ক্ষেত্রেও বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮–তে বেঁধে দেওয়া জরুরি ও যুক্তিযুক্ত।
জাতীয় মহিলা কমিশন আরো বলেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় এইসব অপরিণত ও অপরিপক্ক বালিকাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে অত্যাচারিত হলে ব্যক্তিগত আইনের দোহাই দিয়ে বৈধতার বিচার হয়। মুসলমানদের ব্যক্তিগত আইন নথিভুক্ত বা সুসংহত (কোডিফায়েড) নয় বলে প্রচলিত বিধিসম্মত আইনে অপরাধীদের বিচারও করা যায় না। তাতে ক্ষতি হয় ওই নারী ও তাঁর পরিবারদের। সেই কারণে অবশিষ্ট ভারতের সবার জন্য প্রচলিত আইন মুসলমান নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া জরুরি।
জাতীয় মহিলা কমিশনের পক্ষে তিন আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে এক হলফনামায় জানিয়েছেন, এই জনস্বার্থ মামলার উদ্দেশ্য অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরিণত মেয়েদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যাতে অন্য সব ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইনের সঙ্গে ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ এর সামঞ্জস্য আনা যায়। সাযুজ্য রক্ষা করা যায়। বালিকা বিবাহ রোধ করে নারীত্বের বিকাশ ঘটানো যায়। অত্যাচারিতদের বিচার করা যায়।
তারতম্য দূর করে মহিলা ও পুরুষদের বিয়ের বয়স ২১ করা উচিত কি না সেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সব কিছু খতিয়ে দেখতে এক সংসদীয় কমিটি গঠিত হয়েছ।
জাতীয় মহিলা কমিশনের এই আবেদন প্রকারান্তরে বিজেপির অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নেরই নামান্তর। লক্ষণীয়, বিজেপির সাংসদ কিরোরীমল মীনা শুক্রবারই রাজ্যসভায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনতে এক বেসরকারী বিল উত্থাপন করেন। একই দিনে জাতীয় মহিলা কমিশন মুসলমান নারীদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়ানোর আরজি জানালেন সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্যসভায় যেমন বিলটি পেশ করতে চেয়ারম্যান অনুমতি দেন, সুপ্রিম কোর্টও তেমন মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন।