যৌন কেলেঙ্কারির মামলায় দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার বিজেপির মিত্র কর্ণাটকের সেই প্রোজ্জ্বল

প্রোজ্জ্বল রেভান্নাছবি: এএনআই

যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে দেশ থেকে পালানো ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের হাসন আসনের সংসদ সদস্য প্রোজ্জ্বল রেভান্না গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। জার্মানি থেকে বেঙ্গালুরুতে ফেরা মাত্রই বিমানবন্দরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। নির্বাচন চলাকালে যৌন কেলেঙ্কারির একাধিক ভিডিও প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রোজ্জ্বল দেশ ছেড়ে জার্মানি চলে গিয়েছিলেন। এক মাস পর দেশে ফিরে তিনি গ্রেপ্তার হলেন।

প্রোজ্জ্বল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জেডিএস নেতা এইচ ডি দেবেগৌড়ার নাতি। তাঁর বাবাও জেডিএসের বিধায়ক। এবার লোকসভা নির্বাচনেও তিনি হাসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। লোকসভা ভোটে কর্ণাটকে জেডিএসের সঙ্গে এবার জোট বেঁধেছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। তাঁর হয়ে প্রচার করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। যৌন কেলেঙ্কারির খবর ফাঁস হওয়ার পর প্রোজ্জ্বলকে অবশ্য জেডিএস থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

গতকাল দিবাগত রাত একটায় বিমানবন্দরে নামামাত্র প্রোজ্জ্বলকে বেঙ্গালুরুর পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সিআইডি কার্যালয়ে। তাঁর মুঠোফোন ও সুটকেস পুলিশের জিম্মায় রয়েছে। সংসদ সদস্য হওয়ার দরুন রেভান্না কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী। সেই পাসপোর্ট কেন খারিজ করা হবে না, সে জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে শোকজ করা হয়েছিল। সেই নোটিশের জবাব দেওয়ার শেষ দিন আজ শুক্রবার।

প্রোজ্জ্বলের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন একাধিক নারী, যাঁদের মধ্যে তাঁদের গৃহকর্মীরাও আছেন। দলীয় নেত্রীদেরও কেউ কেউ একই অভিযোগ এনেছেন। যৌন হেনস্তার একাধিক ভিডিও ভোটের সময় প্রকাশ্যে আসে ও ভাইরাল হয়। এরপরই রাজ্য সরকার নড়েচড়ে বসে।

তবে ভিডিও প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রোজ্জ্বল কাউকে না জানিয়ে জার্মানি চলে যান। তত দিনে কর্ণাটকের প্রথম দফার ভোট হয়ে গেছে। প্রোজ্জ্বলের হাসন আসন ছিল যার অন্যতম।

বিতর্ক শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই জেডিএস নেতৃত্ব প্রোজ্জ্বলকে দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তা সত্ত্বেও তিনি দেশে না ফেরায় প্রবীণ দেবেগৌড়া হুমকি দেন। এক বার্তায় তিনি বলেন, প্রোজ্জ্বল যেন তাঁর ধৈর্যের পরীক্ষা না নেন। যেখানেই থাকুন দেশে ফিরে বিচারব্যবস্থার মুখোমুখি না হলে তাঁকে পরিবারের রোষের মুখে পড়তে হবে।

সেই হুমকির পাশাপাশি রাজ্যের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দেন প্রোজ্জ্বলের পাসপোর্ট বাতিল করতে। কেন্দ্রীয় সরকারও উদ্যোগী হয় তাঁর কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের। তাঁকে নোটিশ পাঠানো হয়। এই প্রবল চাপের মুখে প্রোজ্জ্বল গত সোমবার ভিডিও মারফত মা–বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে এক বার্তা পাঠিয়ে জানান, ৩১ মে তিনি দেশে ফিরে আসবেন।

যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ৩৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিকের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ছিল। কিন্তু তখনো কোনো ভিডিও প্রকাশ হয়নি। তাঁকে প্রার্থী না করতে জেডিএস ও বিজেপি—দুই দলের ওপরই দলের মধ্য থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও জেডিএস তাঁকে প্রার্থী করে, বিজেপিও আপত্তি জানায়নি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যাতে হাসন আসনে প্রচারে না যান, সে জন্যও রাজ্য বিজেপি আপত্তি জানিয়েছিল। মোদি তা মানেননি। এখন অবশ্য রাজ্য বিজেপি প্রোজ্জ্বলের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। দলের নেতা এস প্রকাশ বলেছেন, ওই সব ভিডিওর সঙ্গে বিজেপি জড়িত নয়। এই কেলেঙ্কারি নিয়ে দলের কোনো মন্তব্যও নেই।