ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি জিতলেও ১৫ ভোট নিয়ে রহস্য রয়ে গেল
ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রত্যাশামতো জয়ী হলেন শাসক জোট এনডিএ প্রার্থী ও তামিলনাড়ু বিজেপির সাবেক সভাপতি সি পি রাধাকৃষ্ণন। মোট ৪৫২ ভোট পেয়ে তিনি জয়ী হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডি পেয়েছেন ৩০০ ভোট।
শাসক গোষ্ঠীর প্রার্থীর জয় নিয়ে কোনো সংশয় কখনো ছিল না। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার দিনের শেষে রহস্যময় হয়ে দাঁড়াল ১৫ সংখ্যাটি। কারণ, হিসাবের চেয়ে রাধাকৃষ্ণন ১৫টি ভোট বেশি পেয়েছেন। হিসাবের তুলনায় বিরোধীরা ১৫ ভোট কম পেয়েছেন। আবার ঠিক ১৫টি ভোট বাতিলও হয়েছে।
উপরাষ্ট্রপতি পদে ভোটে কোনো দল নির্দিষ্ট কাউকে ভোট দেওয়ার জন্য হুইপ জারি করে না। ভোটও হয় গোপনে। ফলে রাধাকৃষ্ণন কোন ১৫ ভোট বেশি পেলেন, সুদর্শন রেড্ডি কোন ১৫ ভোট কম পেলেন এবং কোন ১৫টি ভোট বাতিল হলো, তা জানার কোনো উপায় রইল না। ফলে দুই শিবিরে পাল্টাপাল্টি দাবির তরজা চলল রাতভর।
উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে ভোট দেন ভারতীয় সংসদের দুই কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যরা। বর্তমানে দুই কক্ষের সদস্যসংখ্যা ৭৮১। তাঁদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৭৬৭ জন। লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে শাসক এনডিএর শরিকদের সদস্যসংখ্যা ৪২৫।
শাসক জোটের প্রার্থীকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অন্ধ্র প্রদেশের ওয়াইএস আর কংগ্রেস। তাদের মোট সদস্য ১১ জন। আম আদমি পার্টির রাজ্যসভা সদস্য স্বাতী মালিওয়ালও অনেক দিন ধরে বিজেপিকে সমর্থন করে চলেছেন। শরিকদের পাশাপাশি এই ১২ জনের সমর্থন মিলে রাধাকৃষ্ণনের পক্ষে ৪৩৭টি ভোট পড়ার কথা ছিল। কিন্তু ফল বলছে, তিনি পেয়েছেন ৪৫২ জনের সমর্থন। অর্থাৎ, ১৫ ভোট বাড়তি।
বিরোধী জোটের পক্ষে ছিল মোট ৩১৫ জন। ভোট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানিয়ে দেন, ইন্ডিয়া জোটের ৩১৫ জন সদস্যই ভোট দিয়েছেন। অথচ গণনা শেষে দেখা গেল, বিরোধী প্রার্থী সুদর্শন রেড্ডি ১৫টি ভোট কম পেয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৩০০ জনের সমর্থন।
বিস্ময় বিপুল হয় যখন রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেল এবং এই ভোটের রিটার্নিং কর্মকর্তা পি সি মোদি জানান, মোট ১৫টি ভোট বাতিল হয়েছে। ক্রস ভোটিংয়ের শঙ্কা দুপক্ষেই ছিল। কারণ, লড়াইটা শেষ পর্যন্ত শাসকবিরোধী বৃত্ত ছেড়ে তামিলনাড়ু–অন্ধ্র প্রদেশের অস্মিতা ও জাত্যভিমানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বিজেপির দাবি ছিল, তামিল রাধাকৃষ্ণনের সমর্থনে তামিল সংসদ সদস্যরা জোটবদ্ধ হবেন। অন্যদিকে অন্ধ্র প্রদেশের গরিমা অটুট রাখতে বিরোধীরা মনে করেছিলেন, সেই রাজ্যের সংসদ সদস্যরাও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সুদর্শন রেড্ডিকে সমর্থন করবেন। কার্যত দেখা গেল, ব্যালট পেপারে যা–ই প্রতিফলন হোক না কেন, ফল গেল শাসক জোটের পক্ষে এবং তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।
এই ভোটে অংশ নেননি ওড়িশার বিজু জনতা দল (বিজেডি), তেলেঙ্গানার ভারত রাষ্ট্র পার্টি (বিআরএস) ও পাঞ্জাবের শিরোমনি অকালি দলের (এসএডি) সংসদ সদস্যরা। তিন দলের মিলিত সদস্যসংখ্যা ১২। তিন দলই একটা সময় পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে।
সি পি রাধাকৃষ্ণন হলেন ভারতের ১৫তম উপরাষ্ট্রপতি। সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন ও রামস্বামী ভেঙ্কটনারায়ণের পর সি পি রাধাকৃষ্ণন হলেন তৃতীয় তামিল উপরাষ্ট্রপতি।