আসন ভাগাভাগি নিয়ে আম আদমির সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা তাহলে হচ্ছে

সবকিছু ঠিকমতো এগোলে দিল্লির সাত লোকসভা আসনের মধ্যে আম আদমি পার্টি (আপ) চারটিতে লড়াই করবে। তিনটি আসন তারা ছেড়ে দেবে কংগ্রেসকে। বিনিময়ে আপ হরিয়ানার ১০টি আসনের মধ্যে তিনটিতে লড়তে চায়। গুজরাটের ২৬ আসনের মধ্যে ভারুচ কেন্দ্রটিও তারা দাবি করেছে।

গতকাল সোমবার দিল্লিতে দুই দলের নেতাদের মধ্যে লোকসভার আসনবণ্টন নিয়ে প্রথম যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে আপের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বৈঠকের পর দুই দলের নেতারাই বলেছেন, খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে খোলামেলা কথা হয়েছে। দুই দলই রাজনৈতিক পরিস্থিতির বাস্তবতা অনুধাবন করেছে। দুই দলই বলেছে, আলোচনা ইতিবাচক। বৈঠকের প্রস্তাবগুলো নিয়ে দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবেন।

কংগ্রেসের পক্ষে গঠিত ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স কমিটির মুকুল ওয়াসনিক, অশোক গেহলট, ভূপেশ বাঘেল, সালমান খুরশিদ ও মোহন প্রকাশ ওই বৈঠকে অংশ নেন। ছিলেন দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দ সিং লাভলিও। আপের পক্ষ ছিলেন দিল্লির মন্ত্রী আতিশি ও সৌরভ ভরদ্বাজ এবং রাজ্যসভার সদস্য সন্দীপ পাঠক। বৈঠকে আপ–শাসিত পাঞ্জাবের আসন সমঝোতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’–এর যেসব শরিকের সঙ্গে আসনবণ্টন নিয়ে বিরোধ হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি তাদের একটি হচ্ছে আপ, অন্যটি তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধ সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি ও পাঞ্জাব নিয়ে। এসব রাজ্যের বাইরে কিছুটা বিরোধ রয়েছে মহারাষ্ট্রেও। সেখানে শিবসেনা (উদ্ধব) ইতিমধ্যেই ২৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দাবি জানিয়ে রেখেছে। মহারাষ্ট্রে মোট আসন ৪৮।

আসন ভাগাভাগি নিয়ে কংগ্রেস শুরু থেকেই নরম। ইতিমধ্যেই তারা মোটামুটিভাবে জানিয়ে দিয়েছে, সব আসনে নজর না দিয়ে জিততে পারে এমন ২৫৫টি আসনে লড়তে চায় তারা। গতবার কংগ্রেস লড়েছিল ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৪২১টিতে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী এবার শুরু থেকেই ‘দেওয়া–নেওয়ার’ ভিত্তিতে আসনবণ্টনের পক্ষে মত দিয়েছেন। দলের সর্বস্তরে তাঁরা এই বার্তা দিয়েছেন, বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে না পারলে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পরম্পরাই মুছে যাবে।

গত লোকসভা ভোটেও দিল্লিতে আপের সঙ্গে কংগ্রেস সমঝোতা করতে চেয়েছিল। তিনটি আসন চেয়েছিল। আপ দুটির বেশি আসন দিতে চায়নি। ফলে সাত আসনেই বিজেপি জয়ী হয়। ওই সাত আসনের মধ্যে কংগ্রেস দ্বিতীয় স্থানে ছিল পাঁচটিতে, দুটিতে আপ। পরবর্তী সময়ে আপ গুজরাট ও গোয়া বিধানসভা ভোটে একা লড়াই করে। প্রতিটি আসনেই তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।

আবগারি নীতি নিয়ে বিজেপির আগ্রাসী মনোভাব ও সিবিআই–ইডির প্রবল চাপে আপ এবার কোণঠাসা। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বারবার ইডির সমন এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁর শঙ্কা, ভোটের আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ কারণে মনে করা হচ্ছে, জোটবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তা আপ নেতৃত্ব উপলব্ধি করেছেন।

বিহার নিয়েও এখন পর্যন্ত কথাবার্তা ইতিবাচক। জেডিইউ ও আরজেডি, দুই দল ১৬টি করে আসনে রাজি না হলে একটি করে আসন বাড়তি পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে পাঁচটি আসনে। একটি আসন পাবে সিপিআই (এমএল)।

মহারাষ্ট্রে সাবেক সংসদ সদস্য ও ‘বঞ্চিত বহুজন আঘাড়ি’ (বিভিএ) দলের নেতা প্রকাশ আম্বেদকর বিরোধী জোটে শামিল হচ্ছেন। শিবসেনা (উদ্ধব) নেতা সঞ্জয় রাউত গতকাল তা জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি মহারাষ্ট্র থেকে লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

তবে পশ্চিমবঙ্গের জট কংগ্রেস কীভাবে ছাড়াবে, তা এখনো অজানা। এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ঠোকাঠুকি চলছে নিত্য। তৃণমূল দুটির বেশি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে রাজি নয়।

অধীর চৌধুরী বলেছেন, তাঁরা তৃণমূলের কৃপা চান না। তৃণমূল আবার একটি আসনও সিপিএমকে ছাড়তে রাজি নয়। এদিকে রাজ্যে কংগ্রেস ও সিপিএম জোটবদ্ধ।