কাশ্মীরে জি-২০ সম্মেলন নিয়ে এবার প্রশ্ন জাতিসংঘে

জি-২০ পর্যটক সম্মেলন নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় চলছে কাশ্মীরে
ফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের কাশ্মীরে জি-২০ পর্যটক সম্মেলন শুরুর তোড়জোড় চূড়ান্ত। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে দেশের গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে প্রচার তুঙ্গে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের সংখ্যালঘুবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক কানাডার অধ্যাপক ফার্নান্ড ডি ভারেনেসের মন্তব্য চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সম্মেলন নিয়ে গত সোমবার সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, জম্মু-কাশ্মীরে যা চলছে, তার আন্তর্জাতিক অনুমোদনের জন্যই ভারত সেখানে জি-২০ সম্মেলন করতে চাইছে। কাশ্মীর পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, অনেকের মতে এটি সামরিক দখলদারত্ব।

বিশেষ প্রতিবেদকের এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে জেনেভায় জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশন। আজ মঙ্গলবার টুইট করে ভারত বলেছে, বিশেষ প্রতিবেদকের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যে ভারত বিস্ময়বিমূঢ়। অযথা তিনি বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং দিতে চেয়েছেন। বিশেষ প্রতিবেদকের অভিমত ‘ভিত্তিহীন ও অবাঞ্ছিত’ জানিয়ে ভারত বলেছে, জি-২০-এর সভাপতি হিসেবে দেশের যেকোনো স্থানে সম্মেলন করার অধিকার ভারতের আছে। প্রতিবেদকের অনুমানভিত্তিক পক্ষপাতদুষ্ট মন্তব্য জাতিসংঘের সনদের পরিপন্থী।

২২ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত পর্যটন–সম্পর্কিত জি-২০-এর ওয়ার্কিং গ্রুপের সম্মেলন বসছে শ্রীনগরে। সম্মেলন সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার। নির্বিঘ্নে সম্মেলন অনুষ্ঠানের স্বার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সভাপতির পদ গ্রহণ করার পর ভারত জানিয়েছিল, দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই জি-২০-এর কোনো না কোনো বিষয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। শীর্ষ সম্মেলন হবে দিল্লিতে, আগামী সেপ্টেম্বরে।

অধ্যাপক ভারেনেস জাতিসংঘের সংখ্যালঘুবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ২০১৭ সালে। তাঁর দাবি, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে চলেছে। জবরদস্তি জনবিন্যাসে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। অন্যান্য অঞ্চল থেকে হিন্দুদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া যায়।

জাতিসংঘের সংখ্যালঘুবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক বলেন, অন্যায় ধরপাকড়, রাজনৈতিক নিপীড়ন, গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ, ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন চাপা দিতে জি-২০–কে দিয়ে তাদের অজান্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষার যেসব বাধ্যবাধকতা আছে, জি-২০-এর তা মেনে চলা উচিত। সম্মেলনে অংশ নিয়ে অবস্থা ধামাচাপা না দিয়ে ও উপেক্ষা না করে জি-২০-এর উচিত জম্মু-কাশ্মীর পরিস্থিতির নিন্দা জানানো।

জম্মু-কাশ্মীরে জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিরোধিতা এখন পর্যন্ত শুধু পাকিস্তানই করেছে। এর আগে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশে জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে চীন অংশ নেয়নি। চীন অরুণাচল প্রদেশকে তাদের অংশ বলে দাবি করে। পাকিস্তানের সর্বঋতুর বন্ধু চীন এখনো স্পষ্ট করেনি, জম্মু-কাশ্মীরের সম্মেলনে তারা অংশ নেবে কি না। কাশ্মীর নিয়ে চীনের অবস্থান পাকিস্তানের সমতুল্য।

অরুণাচল রাজ্যের বৈঠক নিয়ে ভারত খুব একটা প্রচার চালায়নি। কাশ্মীর সম্মেলন নিয়ে প্রচারের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।