‘ইন্ডিয়া’ জোটে আসন সমঝোতার জট খুলছে

কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টির (এসপি) সঙ্গে আসন সমঝোতার পর দিল্লি, গুজরাট, গোয়া, চণ্ডীগড় ও হরিয়ানায় আম আদমি পার্টির (আপ) সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করার পথে এগিয়ে গেল কংগ্রেস।

দীর্ঘ দর-কষাকষির পর গতকাল বুধবার উত্তর প্রদেশে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়। এসপি নেতা অখিলেশ যাদব একটা সময় পর্যন্ত কংগ্রেসকে ছাড়তে রাজি ছিলেন মাত্র ১১টি লোকসভা আসন। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৭টি আসন ছাড়তে রাজি হন। কংগ্রেসও ২২টি আসনের দাবি থেকে সরে এসে ১৭টিতে রাজি হয়।

এবার অধিকাংশ রাজ্যে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আপের সঙ্গে বোঝাপড়া চূড়ান্ত হতে চলেছে। অবশ্য এই বোঝাপড়ার মধ্যে পাঞ্জাব এখনো নেই।

উত্তর প্রদেশের ৮০ আসনে বিজেপির মোকাবিলায় এসপি ও কংগ্রেস কাছাকাছি আসতে পেরেছে রাষ্ট্রীয় লোকদল (আরএলডি) ‘ইন্ডিয়া’ জোট ছেড়ে এনডিএতে চলে যাওয়ায়। দুই দলই বুঝেছে, এর ফলে তাদের লড়াইটা কঠিনতর হয়ে গেছে। ওই অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে অখিলেশকে ফোন করেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, সেই ফোনে বরফ গলে। তার পরেই কংগ্রেসকে ১৭টি আসন ছেড়ে দেওয়া ও তা মেনে নেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দলই ঘোষণা দেয়। পরে এসপি নেতা অখিলেশ যাদব মন্তব্য করেন, ‘কোনো বিরোধ নেই। সব ঠিক আছে। যার শেষ ভালো, তার সব ভালো।’

এসপির সঙ্গে বোঝাপড়ার পরই আপ-কংগ্রেস সমঝোতা আলোচনা গতি পায়। এ ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছে দুটি বিষয়। আবগারি মামলায় আপ নেতৃত্বকে জেরবার করে চলেছে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ও সিবিআই। দিল্লি সরকারের দুই মন্ত্রী অনেক দিন ধরেই জেলবন্দী। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জেরা করতে ইডি একের পর এক সমন জারি করে চলেছে। তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। এই হয়রানির বিরুদ্ধে আপের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস।

আপও উপলব্ধি করেছে, এই লড়াই একা লড়া কঠিন। সেই বোধোদয় তাদের কংগ্রেসের কাছাকাছি আসতে সাহায্য করেছে। দ্বিতীয় ঘটনাটি চণ্ডীগড় পৌরসভায় এক জোট হয়ে লড়া ও মেয়র পদটি বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া।

এনডিটিভির খবর অনুযায়ী, দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেসকে ৩টি ছাড়তে আপ রাজি হয়েছে। তারা লড়বে বাকি চারটিতে। পাশাপাশি, কেন্দ্রশাসিত চণ্ডীগড়ের একমাত্র লোকসভা আসনে লড়বে কংগ্রেস। সেখানে এখন সংসদ সদস্য বিজেপির কিরণ খের। কিন্তু কংগ্রেসের পবন বনসল ওই আসন থেকে তিনবার লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। চণ্ডীগড়ে কংগ্রেসকে সমর্থনে রাজি হয়েছে আপ।

গুজরাটে গত বিধানসভা নির্বাচনে আপ প্রথম একা লড়েছিল। পরে ২০২২ সালের বিধানসভা ও সুরাট পৌরসভা ভোটে বেশ ভালো ফল করেছিল। এবার তারা লোকসভা ভোটেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যের ২৬টি লোকসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেস তাদের ভারুচ ও ভাবনগর আসন দুটি ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে বলে এনডিটিভি জানাচ্ছে। গুজরাটের সব লোকসভা আসন বিজেপির দখলে।

গুজরাটের মতো হরিয়ানার ১০টি লোকসভা আসনও বিজেপি ও তার সহযোগীদের দখলে। এই রাজ্যে কংগ্রেস আপকে একটি আসন ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। গোয়ার দুটি লোকসভা আসনের মধ্যে একটি আপের পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

তবে পাঞ্জাব নিয়ে দুই দল এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। দুই দলের রাজ্য শাখা দিল্লির মতো পাঞ্জাবের ক্ষেত্রেও অনড়। দিল্লির ক্ষেত্রে মিটমাট হলেও পাঞ্জাবের জট কবে ছাড়বে ঠিক নেই। আপ ওই রাজ্যের ১৩টি আসনেই লড়বে বলে গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। এখন সমঝোতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ায় মনে করা হচ্ছে পাঞ্জাবের জটও শিগগির কেটে যাবে।

লোকসভার গত নির্বাচনে পাঞ্জাবে কংগ্রেস আটটি আসন জিতেছিল। আপ একটিতে। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। কংগ্রেসে ভাঙন ধরেছে। রাজ্যে ক্ষমতায় আপ। দুই দলের স্থানীয় নেতৃত্ব একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী।