বিরোধীদের ‘জুতাপেটা’ করার হুমকি তৃণমূল নেতা সৌগতর

তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও সংসদ সদস্য সৌগত রায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার হাতে দুই শীর্ষ নেতার গ্রেপ্তারের ঘটনা মানতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। নেতাদের গ্রেপ্তার নিয়ে এর আগে বিজেপির বিরুদ্ধে আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন দলীয় প্রধান ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার বিরোধীদের হুমকি দিলেন তৃণমূল নেতা সৌগত রায়।

গত শনিবার কলকাতার অদূরে ডানলপে এক পথসভায় তৃণমূলের সংসদ সদস্য সৌগত বলেছেন, বাম ও বিজেপি রাজ্যজুড়ে ‘চোর ধরো, জেলে ভরো’ আন্দোলনের নামে যেভাবে তৃণমূলকে আক্রমণ করছে, তা মেনে নেওয়া হবে না।’ বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে সিপিএম বা বিজেপির কেউ থাকলে তাঁদের হুঁশিয়ার করছি, আপনারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ না করলে কিংবা সংযত না হলে জুতাপেটা করা হবে। তাতে আপনারা দুঃখ করবেন না, আপত্তিও করতে পারবেন না।’

সৌগতর এমন মন্তব্যের পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘তৃণমূল কীভাবে একজন অধ্যাপককে দস্যুতে রূপান্তর করতে পারে, তার প্রমাণ দিলেন সৌগত। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পাবেন না জানার পর দলীয় টিকিট পেতে তিনি নিজেকে বদলে ফেলছেন দলের চাপে। ফলে যে মানুষটা এ রাজ্যে ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, সেই তৃণমূল নেতা সৌগত রায় এবার অনুব্রত মণ্ডলের মতোই এমন বেফাঁস মন্তব্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছেন।’

সৌগত রায় সাবেক অধ্যাপক। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের রাজনীতিকদের মতো তিনি সাধারণত খুব কমই বেফাঁস মন্তব্য করতেন। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেপ্তার নিয়ে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কামারহাটিতে সম্প্রতি এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘এই রাজ্যে আমাদের সরকারই থাকবে। যাঁরা আমাদের বেশি নিন্দা করছেন তাঁদের বলব, তৃণমূলের সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো তৈরি হবে। ওই দিনের জন্যই আপনারা অপেক্ষা করুন।’

সৌগত রায় বলেন, বিজেপি ও সিপিএমের মিছিল করার ক্ষমতা নেই। তাঁদের হুঁশিয়ার করছি, কেউ চোর চোর বলে মিছিল করলে তাঁদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে তাঁরা পার্টি অফিস থেকেও বের হতে পারবেন না। তাঁরা অনুব্রতকে গ্রেপ্তারের পরে স্লোগান উঠেছে, ‘নরেন্দ্র মোদির দুই ভাই ইডি আর সিবিআই’।

গত ২৩ জুলাই গ্রেপ্তার হন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষা এবং শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ভারতে আর্থিক অনিয়মের তদন্তকারী কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পার্থর বিরুদ্ধে অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে স্কুলশিক্ষক নিয়োগে তিনি কোটি কোটি রুপি ঘুষ নিয়েছেন।

এরপর ১১ আগস্ট আরেক কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হন অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর বিরুদ্ধে সীমান্তে গরু পাচারে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুই নেতার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে মমতা বলেছেন, ২০২৪ সালের পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা না থাকায় এবার কেন্দ্রীয় সংস্থার মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্য নেতারাও বিজেপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে বিরোধীদের ধরপাকড়ের অভিযোগ তুলেছেন।