ভারতের মণিপুরে অপহৃত পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, পরে উদ্ধার

গত প্রায় এক বছরের সহিংসতায় উত্তর–পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুরে যে ঘটনা ঘটেনি তা ঘটল গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। মনিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থী এবং সশস্ত্র সংগঠন আরম্বাই টেঙ্গলের সদস্যরা ইম্ফল পূর্ব জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (এএসপি) অপহরণ করে। কোনো জেলার কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে অপহরণের ঘটনা এই প্রথম। মণিপুর পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাজ্য পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় এসপি অমিত সিংকে রাতের মধ্যেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে এই ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে রাজধানী ইম্ফল এবং সংলগ্ন অঞ্চলে।

মণিপুরে গত প্রায় এক বছর ধরে চলা জাতিগত সহিংসতায় এখনো পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং এখনো বাস্তুচ্যুত হয়ে রয়েছেন ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। সহিংসতা এখনো মাঝেমধ্যেই তীব্র আকার ধারণ করছে, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব মনিপুরের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে।

মণিপুর পুলিশের অপারেশন শাখায় কর্মরত অমিত সিংকে উদ্ধারের পরে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।

মনিপুর পুলিশের বিবৃতি

মনিপুর পুলিশ সামাজিক মাধ্যমে এক বার্তায় জানিয়েছে, অন্তত ২০০ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অমিত সিংয়ের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা এএসপির বাড়ি এবং চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ এই অপহরণের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়ে মনিপুর পুলিশ সামাজিক মাধ্যমে যা জানিয়েছে তা থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে ওই জ্যেষ্ঠ পুলিশ অফিসার মেইতেই সম্প্রদায়েরই একজন সদস্য। মনিপুর পুলিশ সমাজ মাধ্যম ‘এক্সে’ লিখেছে, ‘প্রায় ২০০ সশস্ত্র দুর্বৃত্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট মোইরাংথেম অমিত সিং-এর বাসভবনে হামলা চালায়। সশস্ত্র দুষ্কৃতিরা বাসভবনে পরিবারের সম্পত্তিও ভাঙচুর করেছে। এই ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। ফলস্বরূপ, পুলিশ অভিযানে দুই ব্যক্তি আহত হয়েছেন এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই বিষয়ে একটি মামলা নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’

সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা আরম্বাই টেঙ্গলের কর্মী বলে এখন চিহ্নিত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারি সূত্র। কেন তারা এসপির বাড়িতে চড়াও হলো এবং নির্বিচারে গুলি চালালো তার কারণও এখন জানিয়েছে তারা। ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই অজ্ঞাত পরিচয় সরকারি অফিসারদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, গাড়ি চুরির একটি চক্র পরিচালনা করার অভিযোগে আরম্বাই টেঙ্গলের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা অমিত। এই কারণে ৎই তার বাড়িতে চড়াও হয় আরম্বাই টেঙ্গলের সশস্ত্র বাহিনী।  এর আগেই মেইতেই সম্প্রদায়ের নারী সংগঠন মেইরা পাইবির একটি দল পুলিশি হেফাজতে থাকা ওই ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেছিল।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে অমিত সিংয়ের বাবা এম কুল্লা স্থানীয় প্রচার মাধ্যমে বলেছেন, ‘অস্ত্রধারীরা বাসার প্রাঙ্গণে প্রবেশ করার পরে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলার চেষ্টা করি, কিন্তু হঠাৎ তারা গাড়ি ও বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। তাই আমরা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে নিজেদের তালা বন্ধ করে রেখেছিলাম।’ তিনি তাঁর ছেলে অর্থাৎ অমিত সিংকে ফোন করে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন।

অমিত সিং তাঁর দল নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং আরম্বাই টেঙ্গলের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু এর পরিবর্তে তিনি নিজেই অপহৃত হয়ে যান কারণ সশস্ত্র আরম্বাই টেঙ্গলের সদস্য সংখ্যা ছিল পুলিশ বাহিনীর থেকে অনেক বেশি।

কিছুদিন আগে আরম্বাই টেঙ্গলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব রাজ্যের মেইতেই বিধায়ক এবং এমপিদের প্রকাশ্যে তিরস্কার করে সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংগঠনের নির্দেশ মতো রক্ষা করতে না পারার অভিযোগে। উল্লেখ্য বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং প্রধানত আরম্বাই টেঙ্গলের সঙ্গে হাত মিলিয়েই রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিচালনা করছেন।