রামমন্দির উদ্বোধনের পর ভারতের ৮ রাজ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে: এইচআরডব্লিউ

রামমন্দিরফাইল ছবি: এএফপি

অযোধ্যায় ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধনের পর ভারতের অন্তত ৮টি রাজ্যে ২২টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এই ৮ রাজ্য হলো কর্ণাটক, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের ঘটনা পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্রে ঘটেছে। আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

এইচআরডব্লিউর এশিয়ায় অঞ্চলের প্রধান অ্যালেইন পিয়ার্সন বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সুস্পষ্ট আগ্রাসনবিরোধী নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও সেই বার্তা শোনা হয়নি। রাজনৈতিক সুরক্ষা ও দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্রয় পাওয়ার ফলে এমন ঘটনা ঘটছে। হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিদের এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিরুদ্ধে ভারত সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’

প্রতিবেদনে কিছু ঘটনার উদাহরণও দেওয়া হয়েছে। যেমন মহারাষ্ট্র প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্র রাজ্যে, যেখানে বিজেপির জোট সরকার ২০২২ সালের জুনে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। মুম্বাইয়ের মীরা রোড শহরতলিতে একটি মন্দিরের মিছিলে অংশগ্রহণকারী হিন্দুরা মুসলিম বাসিন্দাদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। এর জেরে অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

মুসলমান প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, মন্দির উদ্বোধনের আগের দিন সন্ধ্যায় একটি মসজিদের সামনে লাঠি ও তরবারি নিয়ে হিন্দু জনতা স্লোগান দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে ২৩ জানুয়ারি যখন জঙ্গি হিন্দু জনতা একই এলাকায় এসে পাথর ছোড়ে এবং দোকানে হামলা চালায়। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে তেমন কিছুই করেনি।

স্থানীয় সমাজকর্মী আজিমুদ্দিন সাঈদ এইচআরডব্লিউকে বলেন, ‘পুলিশ শুধু এক পক্ষকে রক্ষা করছে।’ এলাকার মানুষের প্রশ্ন, পুলিশের সবাইকে রক্ষা করা উচিত, নাকি তারা শুধু ধর্মের ভিত্তিতে রক্ষা করবে? সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এ ছাড়া মুম্বাইয়ের এক মুসলমান নারী অভিযোগ করেন, কিছু পুরুষ ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে তাঁকে রাস্তায় হেনস্তা করেছেন।

কর্ণাটক রাজ্যে ১৭ বছর বয়সী এক দলিত কিশোরকে হিন্দু দেবতাদের অপমানের অভিযোগ এনে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা হয়। তার হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে দলিত নেতা ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের একটি ছবি থাকায় তাকে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বিহারে হিন্দু জনতা একটি মুসলিম কবরস্থানে আগুন দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে এইচআরডব্লিউ।

উত্তর প্রদেশের আগ্রার মোগল আমলের একটি মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক অভিযোগ করেন, হিন্দুদের একটি মিছিলের অংশগ্রহণকারী জোর করে মসজিদের কাঠামোতে একটি গেরুয়া পতাকা স্থাপন করে। এরপর পুলিশ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। উত্তর প্রদেশের সন্ত কবির নগর জেলায় পুলিশ পাঁচ স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করেছে, যাঁরা একটি মসজিদে দুইবার প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ।

গুজরাটে হিন্দুদের একটি মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা মুসলমান মহল্লায় আতশবাজি চালান। তাঁরা সেখানে উচ্চ শব্দে গান চালান এবং পাথর নিক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ।

তেলেঙ্গানার সাঙ্গারেড্ডি জেলায় হিন্দু মিছিলে কেউ জুতা ছুড়ে মারার পর জনতা একটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। মহারাষ্ট্রের পানভেলে স্থানীয় বাসিন্দারা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে স্থানীয় কিছু মানুষের মুখোমুখি হওয়ার পর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

২৪ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন।

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন আরও বলেছে, হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হাজার হাজার সমর্থক সারা দেশে মোটরসাইকেল নিয়ে মিছিল বের করেন এবং হিন্দুদের দেবতা রামের সমর্থনে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেন। এই ঘটনার জেরে বেশ কয়েক জায়গায় সংঘাত-সংঘর্ষের শুরু হয়।