দলের খরচ চালাতে জনতার দুয়ারে কংগ্রেস

কংগ্রেস

বিজেপির মোকাবিলা করে দল চালাতে কংগ্রেস অবশেষে জনতার দরবারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক শ বছর আগে ১৯২০–১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী যেভাবে জনতার চাঁদায় নির্ভর করে ‘তিলক স্বরাজ তহবিল’ গড়ে তুলেছিলেন, সেই পথে হেঁটে কংগ্রেসও এবার ‘ক্রাউডফান্ডিং’ করতে চলেছে। আজ সোমবার কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে রাজধানী দিল্লিতে এই তহবিলের সূচনা করেন।

কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস ২৮ ডিসেম্বর। চলতি বছর কংগ্রেসের বয়স হবে ১৩৮ বছর। সেই উপলক্ষে এই অভিযানে মানুষের কাছ থেকে ১৩৮ কিংবা তার গুণিতকে ১ হাজার ৩৮০ অথবা ১৩ হাজার ৮০০ পরিমাণ রুপি চাঁদা হিসেবে চাওয়া হবে। সে জন্য ওই দিন থেকে দেশের সব রাজ্যে জনগণের দুয়ারে দুয়ারে কংগ্রেস কর্মীরা যাবেন, চাঁদা নেবেন। তার আগে আজ থেকে অনলাইনে ওইভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হবে।
কংগ্রেস এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘ডোনেট ফর দেশ’ বা দেশের জন্য দান। আজ এক অনুষ্ঠানে ওই অভিযানের সূচনা করে খাড়গে বলেন, ধনীদের কাছ থেকে, বিশেষ করে শিল্পপতিদের কাছ থেকে অর্থসাহায্য নিলে তাঁদের দাবি বা আবদারের মর্যাদা দিতে হয়। তাঁদের মনের মতো নীতি গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু কংগ্রেস সাধারণ মানুষের দল। গরিব ও বঞ্চিত মানুষের মঙ্গলের কথা বলে। তাঁদের জন্য নিবেদিত। তাই জনতার দরবারেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল, যাতে ধনীদের ইচ্ছা–অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করা যায়।
এ দেশের বামপন্থী দলগুলো প্রথমে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আদায় করত। কিন্তু কংগ্রেস ওই পথে কোনো দিন হাঁটেনি। এই প্রথমবার সেই রাস্তায় এগোনোর কারণ অনেক। দলের ক্ষমতা যত কমছে, তত কমে চলেছে আধিপত্য। গত ১০ বছর কেন্দ্রে ক্ষমতার বাইরে। রাজ্যগুলোতেও আধিপত্য কমছে। এর ফলে সম্পদ সংগ্রহ কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রবলভাবে উঠে এসেছে বিজেপি। অর্থ জোগানের ক্ষেত্রে বিজেপি যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে সিংহভাগ থাবা সেই দলেরই। যেমন ইলেক্টোরাল বন্ড।
২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি রাজনীতিকে ‘স্বচ্ছ’ করতে ২০১৬–২০১৭ সালে ইলেক্টোরাল বন্ড চালু করে। তাতে কোন শিল্পপতি কোন দলকে চাঁদা দিচ্ছে, সেই হিসাব গোপন রাখা হয়। হিসাব থাকে শুধু স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার জিম্মায়, যা কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন। সেই থেকে ২০২১–২০২২ অর্থবছর পর্যন্ত ইলেক্টোরাল বন্ড মারফত দেশের ২৪টি রাজনৈতিক দলের আয় হয়েছে ৯ হাজার ১৮৮ কোটি ৩৫ লাখ রুপি। এর মধ্যে শুধু বিজেপিই পেয়েছে ৫ হাজার ২৭২ কোটি রুপি। কংগ্রেসের প্রাপ্য ৯৫২ কোটি রুপি।
এ ছাড়া বেশির ভাগ রাজ্যে বিজেপি অথবা শরিকরা শাসনক্ষমতায় থাকার ফলে তাদের অর্থসংগ্রহে টান পড়ে না। সরকারি প্রচারের অর্থ খরচ করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। এর মোকাবিলা কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভবপর নয়।
ইলেক্টোরাল বন্ড চালুর সাংবিধানিক বৈধতা; কে কাকে কত টাকা দিচ্ছে, সেই তথ্য জানার অধিকার সাধারণ মানুষের না থাকা; দাতাদের পরিচয় গোপন রাখার যৌক্তিকতা এবং ওই প্রকল্প সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিপন্থী নয় বলে সুপ্রিম কোর্টে সিপিএম, অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস ও কনম কজ সংস্থা মামলা করেছিল ২০১৭ সালে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আজও সেই মামলার রায় শোনাননি।
বিজেপি সময় নষ্ট না করে কংগ্রেসের সমালোচনায় নেমেছে। দলের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে বলেছেন, জনগণের টাকা লোটার এটাও একটা চাল। গান্ধীদের ভাঁড়ার ভরার ফাঁদ। এর মধ্য দিয়ে ওরা গান্ধী ও তিলকেরই অসম্মান করছে।