পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন: মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে দিনভর সংঘাত, নিহত ৩

পশ্চিমবঙ্গের ভাঙ্গরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আজ বৃহস্পতিবার শেষ দিনে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজ্যের উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় সিপিএমের এক কর্মী এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙ্গরে একজন আইএসএফ কর্মী ও তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী নিহত হন।

যদিও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দাবি করেছেন, চোপড়ায় সিপিএমের দুজন খুন হয়েছেন।

এদিকে এই সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট আজ বলেছেন, শুধু স্পর্শকাতর এলাকায় নয়, পুরো রাজ্যের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে।

আজ দুপুরে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় বাম ও কংগ্রেস এক জোট হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য মিছিল করে যাওয়ার পথে তৃণমূলের কর্মীরা গুলি চালান। এতে তিনজন আহত হন। এর মধ্যে একজন বামপন্থী কর্মী মারা যান। গুরুতর আহত দুজন ইসলামপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনার পর সিপিএমের রাজ্য সভাপতি মহম্মদ সেলিম দাবি করেছেন, গুলিতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।

ভাঙ্গরে এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

আজ রক্তাক্ত হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙ্গর। সেখানে সকাল থেকে ভাঙ্গর-২ বিডিও অফিস এলাকা দখল করে নেন তৃণমূলের সমর্থকেরা। এখানের দ্বিতীয় শক্তিধর দল ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ বা আইএসএফ। এ দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেয় তৃণমূল। ফলে এই নিয়ে উত্তপ্ত হয় এলাকা। দুপুরের পর ভাঙ্গর অগ্নিগর্ভ হয়ে পড়ে। মুহুর্মুহু বোমায় কাঁপতে থাকে ভাঙ্গর। বন্ধ হয়ে যায় দোকানবাজার। ছোড়া হয় গুলি। পুলিশ ছোড়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল।

আইএসএফ দাবি করে, তৃণমূলের সমর্থকদের গুলিতে তাদের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই কর্মী আরও দাবি করেছেন বহু আইএসএফ কর্মী বোমা ও গুলিতে আহত হয়েছেন। ভাঙ্গরে বহু গাড়ি, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে ক্যানিং, আমোদপুর, দুবরাজপুর, দিনহাটায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। দিনহাটায় চারটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস, বাম দল এবং আইএসএফ বা ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সমর্থকদের সঙ্গে।

এবার এই রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের প্রথম পর্যায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩ হাজার ২৮৩, পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ৪৯৮ এবং জেলা পরিষদের ৯২৮ আসনে নির্বাচন হচ্ছে। গত নির্বাচনে নির্বাচনী সংঘর্ষে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল এই রাজ্যে। এবার এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ জন।

এদিকে কলকাতা হাইকোর্ট পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে দায়েরকৃত এক মামলায় আজ শুনানি শেষে বলেছেন, শুধু স্পর্শকাতর জেলা নয়, গোটা রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নিয়ে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে।