সিবিআই, ইডির তল্লাশি দিয়ে কি নির্বাচনী তহবিল জোগাড়

ভারতের সুপ্রিম কোর্টছবি: এএনআই ফাইল ছবি

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে (এসবিআই) ভর্ৎসনা করে আবার নোটিশ পাঠালেন সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ আজ শুক্রবার ওই নোটিশ জারি করে বলেন, ১৮ মার্চের মধ্যে নির্বাচনী বন্ড-সম্পর্কিত পূর্ণ তথ্য পেশ করতে হবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, এসবিআই নির্বাচনী বন্ডের নম্বরগুলো জানায়নি। সেই তথ্য তারা গোপন করেছে।

বন্ডের নম্বর থেকে জানা যাবে, দাতা কত টাকার বন্ড কিনেছে এবং সেই বন্ড কোন রাজনৈতিক দল ভাঙিয়ে টাকা তুলেছে। ওই নম্বর থেকে জানা যাবে, কোন দাতা কোন রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিয়েছে। নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বন্ড ছেড়ে থাকে।

এসবিআইয়ের জমা দেওয়া তথ্য নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে তুলে দিয়েছে। সেই সব তথ্য খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে এমন ৩০টি সংস্থার মধ্যে ১৪টিতে গত কয়েক বছরে নানা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তল্লাশি চালিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই, ইডি, আয়কর বিভাগ। নির্বাচনী বন্ড-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই প্রতিবেদন বেরিয়েছে।

দেশের বিরোধী দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে দিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ভারতের শাসক দল বিজেপি এভাবে তার তহবিল বাড়িয়ে চলেছে। দাতার তথ্য গোপন করে এটা এক নির্ভেজাল চাঁদাবাজি। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনী বন্ড মারফত জমা পড়া মোট চাঁদার পরিমাণ ২৪ হাজার ৭৩৭ কোটি রুপি। তার মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছে ১১ হাজার ৫৬২ হাজার কোটি।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচনী বন্ড-সংক্রান্ত তথ্য থেকে কোন সংস্থা কত রুপির বন্ড কিনেছে ও কোন রাজনৈতিক দল কত চাঁদা পেয়েছে, জানা গেলেও কে কত টাকার বন্ড কিনে কোন দলকে দিয়েছে, সেটা জানা যাচ্ছে না। বন্ডের নম্বর পাওয়া গেলে তা জানা সম্ভব হবে। সেই তথ্য জমা না দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট আজ শুক্রবার এসবিআইকে ভর্ৎসনা করেছে।

তবে যেসব তথ্য জমা পড়েছে, তা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে। তাতে দেখানো হয়েছে, সবচেয়ে বেশি টাকার বন্ড কিনেছে এমন প্রথম পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি এমন সময় বন্ড কিনেছে, যখন তাদের প্রতিষ্ঠানে ইডি ও আয়কর কর্তারা তল্লাশি চালাচ্ছিলেন।

ওই তিন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে লটারি সংস্থা ফিউচার গেমিং, অবকাঠামো নির্মাণকারী সংস্থা মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং ও খনিজ পদার্থ উত্তোলনকারী সংস্থা বেদান্ত লিমিটেড। ফিউচার গেমিং বন্ড কিনেছে মোট ১ হাজার ৩৬৮ কোটি রুপির। সর্বোচ্চ বন্ড কেনার তালিকায় তারাই আছে সবার ওপরে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং। তারা কিনেছে ৯৮০ কোটি রুপির বন্ড। বেদান্ত লিমিটেডের স্থান চতুর্থ। তারা চাঁদা দিয়েছে ৪০০ কোটি রুপি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিউচার গেমিংয়ের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে ২০১৯ সালের গোড়ার দিকে ইডি তল্লাশি চালায়। সেই বছরের জুলাইয়ে ইডি ওই সংস্থার ২৫০ কোটি রুপির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। ২০২২ সালে বাজেয়াপ্ত করে আরও প্রায় ৪১০ কোটি রুপির সম্পত্তি।

২০২০ সালের অক্টোবরে ফিউচার গেমিং প্রথম নির্বাচনী বন্ড কেনে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তারা সবার চেয়ে বেশি বন্ড কিনেছে। মোট পরিমাণ ১ হাজার ৩৬৮ কোটি রুপির।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বন্ড কেনে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং। সংস্থাটি হায়দরাবাদের। তারা নানা অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত। কাশ্মীরে জোজি লা টানেলের কাজ তারা করছে। ২০১৯ সালে তাদের প্রতিষ্ঠানেও তল্লাশি অভিযান চলে। এরপর পরের বছরই তারা প্রথম নির্বাচনী বন্ড কেনে। মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং মোট ৯৮০ কোটি রুপির বন্ড কিনেছে।

বন্ড মারফত রাজনৈতিক দলগুলোর সেরা পঞ্চম চাঁদা দাতা বেদান্ত লিমিটেড। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তারা আইন ভেঙে চীনের কয়েকজন নাগরিককে ভিসা পাইয়ে দিয়েছিল। সেটা ছিল ২০১৮ সাল। ইডির ওই অভিযোগের পরের বছরেই তারা ৩৯ কোটি রুপির প্রথম বন্ড কেনে। পরের চার বছর ধরে তারা নিয়মিত বন্ড কিনেছে, যার পরিমাণ ৪০০ কোটি রুপি।

দ্য কুইন্টের খবর অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ৩০টি বন্ড কেনা সংস্থার মধ্যে অন্তত ১৪টির বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই ও আয়কর বিভাগ কোনো না কোনো অভিযোগে তল্লাশি চালিয়েছে।