মমতা-ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতির প্রতিবাদে সোচ্চার বিরোধীরা

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের দুর্নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে বিরোধী দল ও বিভিন্ন সংগঠন
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের দুর্নীতির প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছে বিরোধীরা। শাসক দলের দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগের দাবিতে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর রাজ্য সচিবালয় নবান্ন ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে রাজ্য বিজেপি।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সংসদ সদস্য সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর নবান্ন ঘেরাও অভিযানে শহর ও গ্রামের লাখো মানুষ অংশ নেবেন, মমতার অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি তুলবেন। তিনি বলেছেন, এবার আর রক্ষা নেই তৃণমূলের। তাদের দুর্নীতির নানা ছবি প্রতিদিন ভেসে উঠছে রাজ্যজুড়ে। একের পর এক ফাঁস হচ্ছে নানা কুকীর্তি, ঘুষ, কেলেঙ্কারির কথা। তাই এবার এই রাজ্যের মানুষ শাসক দলের দুর্নীতির জবাব দেবে। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়ার ঘোষণা দেবে। যোগ্য জবাব মিলবে তাদের।

দুর্নীতির দায়ে তৃণমূলের মহাসচিব ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কয়েক দিন আগে। পার্থর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মডেল–অভিনেত্রী অর্পিতার কলকাতার দুটি ফ্ল্যাট থেকে ৫০ কোটি রুপি উদ্ধার করেন ভারতে অর্থ কেলেঙ্কারি তদন্তের দায়িত্বে থাকা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট–ইডির কর্মকর্তারা। এরপর গরু পাচারে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার সকালে বীরভূমের বোলপুরের বাসভবন থেকে তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)।

অনুব্রত গ্রেপ্তার হওয়ার পর রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভ। রাস্তায় নামেন অনেক মানুষ। বিলি করেন গুড় বাতাসা, জল বাতাসাসহ নানা ধরনের মিষ্টি। এ সময় অনেককে ঢাক বাজাতেও দেখা যায়। অনুব্রতকে ‘গরুচোর’ আখ্যা দিয়ে গরু নিয়ে রাস্তায় নামেন কংগ্রেসের কর্মীরা। প্রতিবাদ মিছিল করেন। তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীকে একজোট হয়ে আন্দোলনে নামার ডাক দেয় বিজেপি, কংগ্রেস ও বাম দল। বিজেপির পক্ষ থেকে পৃথক মিছিল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। অন্যদিকে অনুব্রতের পক্ষেও রাস্তায় নামেন তাঁর সমর্থকেরা।

শুক্রবার বিকেলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কলকাতা কমান্ড হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর সন্ধ্যায় সিবিআইয়ের নিজাম প্যালেসের দপ্তরে অনুব্রতকে জেরা করেন সিবিআইয়ের কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে গরু পাচারের টাকা কীভাবে তিনি পেতেন এবং কারা এর ভাগ পেতেন, তা জানতে চান সিবিআইয়ের কর্মকর্তারা।

শাসক দলের দুর্নীতির প্রতিবাদে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র বিজেপি, কংগ্রেস ও বাম দল এবং তাদের ছাত্র ও যুব সংগঠন পৃথকভাবে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করে। অবিলম্বে শাসক দলের দুর্নীতিবাজ নেতাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

অনুব্রত মন্ডলকে গ্রেপ্তারের পর সরাসরি তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি তৃণমূল কংগ্রেস। বরং দলটি বলেছে, দল দুর্নীতির পক্ষে নেই, অনুব্রতের পাশেও নেই। তবে তৃণমূল সিবিআইসহ কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শুক্রবার থেকে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেছে। প্রতিটি সমাবেশ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, ইডি ও সিবিআইকে নিরপেক্ষ হতে হবে। ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে। এ সময় ইডি–সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতার দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়।