মণিপুরে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বিশেষ আইনের মেয়াদ বাড়ল

কুকিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী আফস্পার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেছবি: এএনআই

উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্য সরকার মঙ্গলবার থেকে আরও ছয় মাসের জন্য রাজ্যে সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইনের (আফস্পা) মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে রাজধানী ইম্ফলের পৌর এলাকা ও শহরাঞ্চলের ১৯টি থানাকে এর বাইরে রাখা হয়েছে। এই বিশেষ আইনে সাধারণ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার বিঘ্নিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওই ১৯টি থানা অঞ্চল বাদ দিয়ে বাকি মণিপুরকে একটি ‘অশান্ত এলাকা’ বলে ঘোষণা করেছেন রাজ্যপাল অনুসুইয়া উইকে।

এই বিশেষ আইন স্থগিত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংগঠন মণিপুরে আন্দোলন করছে। কুকি-জোসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় আফস্পার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় ও রাজ্যের নাগা অধিবাসীরাও নতুন করে আফস্পা বলবৎ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। তবে মণিপুরের চলমান সংঘাতের কারণে এই আইন আপাতত উঠবে না বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, আফস্পার অধীন আইন লঙ্ঘন করলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের হত্যা, পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার ও তল্লাশি চালাতে পারে। এ ছাড়া এ আইনের আওতায় গুলি চালিয়ে হত্যা করলেও একজন নিরাপত্তাকর্মীর বিরুদ্ধে সহজে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। আইনটি নতুন করে মণিপুরে ফেরায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মানবাধিকারকর্মীদের একাংশ।

নির্বাচনী প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা

মণিপুর সম্ভবত ভারতের একমাত্র রাজ্য, যেখানে ইম্ফলসহ রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়–নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আর নির্বাচনী প্রচার করতে সাহস করবে না। কারণ, মেইতেই সমাজের কট্টরপন্থী এবং আংশিকভাবে সশস্ত্র সংগঠন আরম্বাই টেঙ্গলের দেওয়া ঘোষণা।

সম্প্রতি টেঙ্গল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মাইক লাগিয়ে প্রচারের মতো ছোটখাটো প্রচারও মণিপুরে আর করা যাবে না। লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে ১৯ ও ২৬ এপ্রিল নির্বাচন হবে মণিপুরে।

শেইসরাম রবার্টসন নামের আরম্বাই টেঙ্গলের সদর দপ্তরের এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনের আগে শব্দদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রকাশ্য স্থানে লাউডস্পিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আরম্বাই টেঙ্গল ব্যাপক শক্তিশালী সংগঠন। অতীতে তাদের কথা না শোনার কারণে প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে এমপি এবং এমএলএদেরও হেনস্তা করা হয়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং টেঙ্গলের কাজের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেননি।

রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের দলীয় প্রার্থীর পতাকা উত্তোলন বন্ধ করারও নির্দেশ দিয়েছে আরম্বাই টেঙ্গল। এটি মণিপুরে নির্বাচনী প্রচার শুরু করার সময় একটি ঐতিহ্যবাহী রীতি। এর মাধ্যমে রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্রে উন্নীত হয়েছিল। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের ঘরে ঘরে প্রচারণা এবং রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও সাধারণ সমাবেশ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।