পশ্চিমবঙ্গে এগিয়ে থাকার খবরে বিজয় উৎসব শুরু করেছে তৃণমূল

পশ্চিমবঙ্গে ফল ঘোষণায় এগিয়ে থাকার খবরে উৎসবে মেতে উঠেছেন তৃণমূলের সমর্থকেরা। ৪ জুন কলকাতায় মমতার বাড়ির বাইরেছবি: এএফপি

ভারতীয় সময় দুপুর ১২টায় অর্থাৎ গণনা বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়ার পরে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস ৪২ আসনের মধ্যে ৩৩ আসনে এগিয়ে। শেষ পর্যন্ত এতগুলো আসন তৃণমূল কংগ্রেস ধরে রাখতে পারবে কি না, তা অবশ্য বলা মুশকিল। তবে যদি পারে, তাহলে ২০১৯ সালের ২০ আসনের থেকে তারা পাবে ১৩টি বেশি আসন।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এই মুহূর্তে ৪২ আসনের মধ্যে ৯টিতে এগিয়ে, যা তাদের গতবারের পাওয়া ১৮ আসনের অর্ধেক।

এখন পর্যন্ত কোনো ফল ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু এক-তৃতীয়াংশ গণনা শেষ হওয়ার পরে যে ‘চিত্র’ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকেরা ইতিমধ্যেই বিজয় উৎসব শুরু করেছেন। কলকাতা শহরে এখনো তারা রাস্তায় না বেরোলেও রাজ্যের জেলাগুলোয় তৃণমূলের রং সবুজ আবির পরস্পরকে মাখিয়ে এবং স্লোগান দিয়ে তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে সিপিআইএম এই মুহূর্তে কোনো আসনে এগিয়ে নেই। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে সিপিআইএম দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে পেছনে ফেলে দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খান।

মুর্শিদাবাদেরই বহরমপুর আসনে রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান অধীররঞ্জন চৌধুরীকে সামান্য পাঁচ হাজার ভোটে পেছনে ফেলে দিয়েছেন ভারতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তৃণমূল ও বিজেপির পরে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য অধীর চৌধুরী।

কৃষ্ণনগর আসনে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছেন মহুয়া মৈত্র।

বিজেপির দুই সভাপতিই পিছিয়ে

এই মুহূর্তে বিজেপির দুই রাজ্য সভাপতি—বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও সাবেক সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজ নিজ আসনে পিছিয়ে রয়েছেন। সুকান্ত পিছিয়ে রয়েছেন বালুরঘাটে এবং দিলীপ বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে।

চতুর্থ রাউন্ডের পর ৩০ হাজারের বেশি ভোটে দিলীপ ঘোষকে পেছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ।

এখন পর্যন্ত মোটামুটি তিন থেকে পাঁচ রাউন্ড গণনা হয়েছে। অর্থাৎ মাত্র এক-তৃতীয়াংশ গণনার পরে এই ফল পাওয়া যাচ্ছে। গণনার শেষে এই ফল পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।

সন্দেশখালীর চিত্র

এখন পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের যাঁরা এগিয়ে রয়েছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বসিরহাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হাজী নুরুল ইসলাম।। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির রেখা পাত্রের চেয়ে আড়াই লাখের বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছেন।

নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের যে এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংঘাত ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেটি হচ্ছে বসিরহাট আসনের অন্তর্গত সন্দেশখালী বিধানসভা আসন। কয়েক মাস ধরে সেখানে লাগাতার গন্ডগোল ও সংঘাত চলে। বিজেপি সন্দেশখালী অঞ্চল থেকেই দাঁড় করায় রেখা পাত্রকে। কিন্তু ওই অঞ্চলের সব কটি বুথে পিছিয়ে রয়েছেন রেখা।

বিজেপির স্থানীয় এক কর্মী বাবলু দাস প্রথম আলোকে বসিরহাট থেকে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রেখা পাত্র কোনো গণনাকেন্দ্রে নেই। সম্ভবত তাঁর নিজের গ্রামেও নেই। হামলার শিকার হতে পারেন—এমন আশঙ্কার কারণেই তিনি প্রকাশ্যে নেই।

মেদিনীপুরের ঘাটাল কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী অভিনেতা দেব। এখন পর্যন্ত ব্যবধান ২০ হাজারের সামান্য বেশি।

বারবার দল বদল করা বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং পিছিয়ে রয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরে। ওই আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের পার্থ ভৌমিক ৫০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছেন।

বিজেপির দুই তারকা প্রার্থী অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্র পাল—দুজনেই পিছিয়ে রয়েছেন। তবে দার্জিলিং কেন্দ্রে ৩০ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপির প্রার্থী রাজু বিষ্ঠা।

২০১৯ সালে উত্তরবঙ্গের সব কটি আসন পেলেও এবারে অনেক আসনে এখনো এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।