বিজেপির মনোনয়নবঞ্চিতদের অসন্তোষ ভোটে কতটা প্রভাব ফেলবে

বিজেপির পতাকাছবি: এএনআই

ভারতের শাসক দল বিজেপি লোকসভা ভোটের প্রথম দফার প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দলে অসন্তোষ ও অশান্তি দেখা দিয়েছে। এই অসন্তোষ আগামী দিনে কী রূপ নেয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নজর এখন সেদিকে।

প্রার্থীর তালিকায় নাম থাকার খবর পাওয়ার পরই সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দিল্লির চাঁদনি চকের সংসদ সদস্য হর্ষ বর্ধন।

চোখ-কান-গলার বিশিষ্ট এই চিকিৎসক বিবৃতি দিয়ে জানান, ৩০ বছরের বেশি রাজনীতি করেছেন। পাঁচবার বিধায়ক হয়েছেন, দুবার সংসদ সদস্য। এবার তিনি তাঁর শিকড়ে ফিরবেন। অর্থাৎ চিকিৎসা পেশায় মন দেবেন। তিনি লিখেছেন, ‘দিল্লির কৃষ্ণনগরের ইএনটি চেম্বার আমার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।’

গত শনিবার বিজেপির ঘোষিত ১৯৫ জনের প্রার্থীর তালিকায় হর্ষ বর্ধনের মতো নাম নেই দিল্লির আরও ৩ সংসদ সদস্যের। তাঁদের মধ্যে মীনাক্ষী লেখি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। বাকি দুজন হলেন পরবেশ ভার্মা ও রমেশ বিধুরি। গত পাঁচ বছরে এই দুজন বিশেষ পরিচিতি পেয়েছিলেন ঘৃণা ভাষণের জন্য।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও দিল্লি দাঙ্গার সময় পরবেশ ভার্মার ঘৃণা ভাষণ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। রমেশ বিধুরি সম্প্রতি লোকসভায় বহুজন সমাজ পার্টির নেতা দানিশ আলির বিরুদ্ধে নানা অসংসদীয় শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন।

তাঁদেরই মতো বাদ গেছেন ভোপালের সংসদ সদস্য প্রজ্ঞা ঠাকুর। মুসলমান বিদ্বেষ ও ঘৃণা ভাষণের জন্য তিনিও বিশেষ পরিচিত। টিকিট না পেয়ে প্রজ্ঞা বলেছেন, সম্ভবত তাঁর মন্তব্য ও মতামত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পছন্দ হয়নি। পছন্দ হোক না হোক, ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করে তোলার কাজ তিনি করেই যাবেন।

তবে প্রার্থী হয়েও ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার ঘটনাও ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থীর তালিকায় নাম ছিল ভোজপুরি নায়ক-গায়ক পবন সিংয়ের। কিন্তু এক দিন পরেই গতকাল রোববার তিনি ভোটে না লড়ার কথা জানিয়ে দেন।

পবনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি তাঁর গানে বাংলার নারী সমাজকে অপমান করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল।

বিজেপির রাজনৈতিক শক্তি এই মুহূর্তে যতখানি এবং দলে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর ক্ষমতা যা, তাতে অসন্তোষ থাকলেও তা বিদ্রোহের আকার নেবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। যদিও অসন্তোষের কারণে কোনো কোনো কেন্দ্রে বিজেপির জেতার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পুরো তালিকা প্রকাশ না হলে অসন্তোষের মাত্রা বোঝা যাবে না।

আজকালের মধ্যে বিজেপির দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা। সেই তালিকায়ও বেশ কিছু সংসদ সদস্যের নাম থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই অনিশ্চয়তা রয়েছে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান ভি কে সিং, সুলতানপুরের মানেকা গান্ধী ও তাঁর ছেলে পিলিভিটের বরুণকে ঘিরে।

মানেকা ও বরুণের প্রতি দল বিশেষ খুশি নয়। দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বরুণ খবরের কাগজে সমালোচনামূলক নিবন্ধও লিখেছেন।

উত্তর প্রদেশের কাইজারগঞ্জের বিতর্কিত সংসদ সদস্য ও কুস্তি ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের নামও এবার কাটা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন দেশের পদকপ্রাপ্ত কুস্তিগিরেরা।

বিজেপি অস্বস্তিতে রয়েছে মহারাষ্ট্র নিয়ে। সেখানে সরকারের অন্য দুই শরিক শিবসেনা (শিন্ডে) ও এনসিপিকে (অজিত পাওয়ার) খুশি করা প্রায় অসম্ভব। মহারাষ্ট্রে এখনো কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যেই তিন শরিকের মধ্যে প্রবল টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।

প্রথম তালিকায় বিজেপি টিকিট দেয়নি ৩৩ জন সংসদ সদস্যকে। পরবর্তী সময় কতজনের ঘাড়ে কোপ পড়ে, তা দেখার। বিক্ষুব্ধদের সংখ্যা কতটা বৃদ্ধি পায়, সেদিকে নজর রয়েছে বিরোধীদের। বিশেষ করে কংগ্রেসের।

মধ্যপ্রদেশের গুনা থেকে এবার বিজেপির টিকিট পেয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। ওই কেন্দ্রের বর্তমান সংসদ সদস্য কৃষ্ণপাল সিং যাদব। বিজেপির এই সংসদ সদস্য দলীয় টিকিট না পাওয়ায় অখুশি।

২০১৯ সালে গুনায় বিজেপির হয়ে কৃষ্ণপালই হারিয়েছিলেন সিন্ধিয়াকে। কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব চাইছে কৃষ্ণপালকে দলে টেনে সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধে প্রার্থী করতে।