ধর্মীয় স্থানের সুরক্ষায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ ভারতের মুসলিম ল বোর্ড

ভারতে কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থান যাতে আর ভাঙা না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে এবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাল মুসলমান সম্প্রদায়ের সামাজিক ও আইনি নীতিনির্ধারক সর্বোচ্চ সংস্থা অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (পিএলবি)।

আবেদনে পিএলবি বলেছে, ভারতে ১৯৯১ সালের ‘প্লেসেস অব ওয়ারশিপ অ্যাক্ট’ যাতে পরিবর্তন করা না হয়, তা নজরে রাখা প্রয়োজন। এ আইনে বলা হয়েছিল, ভারতের স্বাধীনতার দিন, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশে কোনো ধর্মীয় স্থান যেভাবে ছিল, সেটিকে সে অবস্থাতেই রাখতে হবে। তার ধর্মীয় চরিত্র পরিবর্তন করা যাবে না। অর্থাৎ মন্দিরের জায়গায় মসজিদ বা মসজিদ সরিয়ে মন্দির নির্মাণ করা যাবে না। শুধু রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদকে এ আইনের বাইরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু গত এক বছরে একাধিকবার ১৯৯১ সালের আইনকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন আদালতে মামলা করা হয়েছে। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এ আইন চট করে পরিবর্তন করা যাবে না সংসদে আইনটিকে সংশোধন না করে।

ভারতে ১৯৯০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রামমন্দির নির্মাণের উদ্দেশ্যে রথযাত্রা বের করেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৯১ সালের ১৮ ডিসেম্বর একটি আইন পাস করে, যার নাম প্লেসেস অব ওয়ারশিপ অ্যাক্ট (স্পেশাল প্রভিশনস)। এই আইনে বলা হয়, ধর্মীয় স্থানের অবস্থান অপরিবর্তিত রাখতে হবে।

ফলে, এ আইন যদি সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ভারতে অসংখ্য ধর্মীয় স্থানের চরিত্র পরিবর্তন করা হবে বলে আশঙ্কা করছে পিএলবি। বস্তুত, বিষয়টি যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মসূচিতে আছে, তা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন শ্রীধর দামলে। তিনি শিক্ষাবিদ, কিন্তু দীর্ঘদিন ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত। ১৯৮৭ সালে তিনি লিখেছিলেন, ‘২৫টি মসজিদকে পাল্টে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে।’ এ তালিকা এখন আরও দীর্ঘ হয়েছে।

বিষয়টি মাথায় রেখেই পিএলবির তরফে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালের আইন সব ধর্মের সাংবিধানিক স্বীকৃতির কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছিল। এ আইন অপরিবর্তিত থাকুক এবং ভবিষ্যতে যাতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দাবির ভিত্তিতে এ আইন পরিবর্তন করা না যায়, সেদিকে নজর রেখে নতুন করে আবেদনের রাস্তা বন্ধ করা হোক। কারণ, এর ফলে আইনশৃঙ্খলার প্রবল সমস্যা হতে পারে। যেমন ১৯৯১ সালে বাবরি মসজিদ নিয়ে ওঠা বিতর্কের পরে গোটা দেশে দাঙ্গায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

আরএসসের তাত্ত্বিক লেখক শ্রীধর দামলেও তাঁর ‘দ্য ব্রাদারহুড ইন স্যাফ্রন’ বইতেও কার্যত এ একই কথা লিখেছেন। তিনি বলেছেন, মসজিদ সরানোর ‘এই প্রক্রিয়া জনপ্রিয় অবশ্যই হতে পারে এবং এর ফলে হিন্দুদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ আরও শক্তিশালী হতে পারে। এ কথা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও ঠিক, এর ফলে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিরোধ বাড়বে’।