বাবার জেদ আর ছেলের ক্ষোভের ভয়ংকর পরিণতি
ভারতের উত্তর প্রদেশে ষাটের কোঠায় থাকা এক দম্পতি হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁদের খুঁজতে নেমে পুলিশের সামনে লোমহর্ষক এক জোড়া খুনের ঘটনা চলে আসে। বাবার জেদ আর ছেলের ক্ষোভ শেষ পর্যন্ত কীভাবে ভয়ংকর খুনের ঘটনায় রূপ নেয়, পুলিশি তদন্তে তা উঠে আসে।
পুলিশ শ্যাম বাহাদুর (৬২) ও তাঁর স্ত্রী ববিতাকে (৬০) খুন করার অভিযোগে তাঁদের ছেলে অম্বেশকে গ্রেপ্তার করেছে। এই তরুণ পেশায় প্রকৌশলী।
পুলিশ বলেছে, অম্বেশই নিজের মা–বাবাকে হত্যা করে তাঁদের মৃতদেহ করাত দিয়ে টুকরা টুকরা করে কেটে নদীতে ফেলে দেন।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, অম্বেশের মুসলিম স্ত্রীকে তাঁর পরিবার মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে মা–বাবার সঙ্গে অম্বেশের দীর্ঘদিন ধরেই ঝগড়া-বিবাদ চলছিল। শেষ পর্যন্ত অম্বেশও তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
বিবাহবিচ্ছেদের জন্য স্ত্রীকে ভরণপোষণের অর্থ দিতে হবে, এ জন্য অম্বেশের অর্থের প্রয়োজন পড়ে। তিনি বাবার কাছে অর্থ চান। কিন্তু অম্বেশের বাবা অর্থ দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
পুলিশ জানায়, খুনের দিনও এ নিয়ে মা–বাবার সঙ্গে অম্বেশের তুমুল ঝগড়া হয়।
১৩ ডিসেম্বর অম্বেশের বোন বন্দনা উত্তর প্রদেশের জৌনপুর জেলার জাফরাবাদ পুলিশ স্টেশনে মা–বাবা নিখোঁজের একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর মা–বাবা ও ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর ভাই অম্বেশ গত ৮ ডিসেম্বর তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, তাঁর (অম্বেশ) সঙ্গে ঝগড়ার পর মা–বাবা বাড়ি থেকে চলে গেছেন। তিনি তাঁদের খুঁজতে বের হচ্ছেন।
তার পর থেকে অম্বেশের ফোন বন্ধ এবং তিনি আর ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
বন্দনার অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে। বন্দনাকে অম্বেশের ফোন এবং তাঁর ফোন যেখানে বন্ধ (সুইচ অফ) করা হয়েছে, তা দেখে পুলিশের মনে সন্দেহ জাগে।
এক সপ্তাহ পর পুলিশ অম্বেশকে গ্রেপ্তার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং সব দোষ স্বীকার করে নেন।
শ্যাম বাহাদুর একজন অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মচারী ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ববিতা। এ দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে অম্বেশ প্রায় পাঁচ বছর আগে এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেন। তাঁর মা–বাবা এই বিয়ে মেনে নেননি এবং তাঁদের মুসলিম পুত্রবধূকে বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না বলে জানিয়েছিলেন।
অম্বেশের দুই সন্তান জন্মের পরও তাঁর মা–বাবা তাঁর মুসলিম স্ত্রীকে মেনে নেননি এবং তাঁকে বাড়িতে আনতে দেননি।
অম্বেশের ভাষ্য অনুযায়ী, বাবা শ্যাম বাহাদুর তাঁকে বারবার স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে চাপ দিতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি হাল ছেড়ে দেন এবং স্ত্রীকে বলেন, তাঁদের আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো। স্ত্রী এতে সম্মত হন এবং ৫ লাখ রুপি খোরপোষ দাবি করেন।
খোরপোষের অর্থ অম্বেশ জোগাড় করতে পারছিলেন না। কয়েক মাস ধরে তিনি জৈনপুরে মা–বাবার সঙ্গে বসবাস করছিলেন। ৮ ডিসেম্বর তিনি স্ত্রীর ভরণপোষণের জন্য বাবার কাছে অর্থ চান। কিন্তু শ্যাম বাহাদুর রাজি হননি। এ নিয়ে মা–বাবার সঙ্গে অম্বেশের ঝগড়া শুরু হয় এবং উত্তেজিত অম্বেশ মসলা বাটার পাথরের তৈরি পুতা দিয়ে মায়ের মাথায় আঘাত করেন।
এই দৃশ্য দেখে শ্যাম বাহাদুর চিৎকার শুরু করলে অম্বেশ তাঁকেও পুতা দিয়ে মাথায় একাধিকবার আঘাত করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বৃদ্ধ দম্পতি মারা যান।
হত্যার প্রমাণ নষ্ট করার জন্য অম্বেশ গ্যারেজ থেকে একটি করাত এনে প্রথমে মৃতদেহগুলো টুকরা টুকরা করেন এবং ছয়টি ব্যাগে ভরে সেগুলো গাড়ির বুটে রাখেন। ভোরে গাড়ি চালিয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে টুকরা মৃতদেহগুলো নদীতে ফেলে দেন।
এরপর অম্বেশ বোন বন্দনকে ফোন করে বলেন, ঝগড়ার পর মা–বাবা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন। তিনি তাঁদের খুঁজতে বের হচ্ছেন। তারপর ফোন বন্ধ করে দেন।
অম্বেশ ছয় দিন বাড়ি ফেরেননি। তাঁর ফোনও বন্ধ ছিল। ১৪ ডিসেম্বর হঠাৎ তিনি জৈনপুরে ফিরে আসেন। বোনেরা তাঁর কাছে মা–বাবার খবর জানতে চান। কিন্তু তিনি বোন এবং অন্য স্বজনদের প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে থাকেন।
বোনেরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে অম্বেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শুরুতে তিনি পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলেও পরে ভেঙে পড়েন এবং মা–বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
অম্বেশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ মরদেহের টুকরাগুলো খুঁজতে শুরু করে। শ্যাম বাহাদুরের দেহের একটি অংশ উদ্ধার হয়েছে। বাকি অংশগুলো উদ্ধারের জন্য নদীতে তল্লাশি চলছে।
দুজনকে হত্যায় ব্যবহৃত পুতা ও করাত উদ্ধার করা হয়েছে।