নাগপুরের জনসভা থেকে বিজেপিকে হারানোর ডাক কংগ্রেসের

কংগ্রেসের ১৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের রাজধানী নাগপুরে সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির নেতা রাহুল গান্ধীছবি: এএনআই

রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) সদর দপ্তর মহারাষ্ট্রের নাগপুরের জনসভা থেকে আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হারানোর ডাক দিলেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। সেই আহ্বান জানানো হলো কংগ্রেসের ১৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনেই। এই জনসভার মধ্য দিয়েই কংগ্রেস শুরু করল লোকসভার পরবর্তী ভোটের প্রচার অভিযান।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলের এই জনসভায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী বলেন, কংগ্রেস শুধু কোনো দলকে হারাতে চাইছে না। কংগ্রেস চাইছে আরএসএস-বিজেপির নীতি ও আদর্শকে নির্মূল করতে, যা চিরন্তন ভারতের সর্বগ্রাহ্য ভাবধারা ধ্বংস করে দেশকে একদর্শী করে তুলতে চাইছে।

রাহুল তাঁর ভাষণে কংগ্রেসের সব নেতা-কর্মীকে বাঘের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, এই লড়াই শুধু ক্ষমতা দখলের নয়, এটা দুই বিপরীতধর্মী বিচারধারার লড়াই। সনাতন ভারতের আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে আরএসএস-বিজেপির বিচারধারাকে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করতে হবে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের কণ্ঠেও ছিল তারই প্রতিধ্বনি। সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, কংগ্রেসকে সঙ্গ দিন, কংগ্রেস দেশবাসীকে ‘ন্যায়’ দেবে। এই ‘ন্যায়’ শব্দটি দ্ব্যর্থক। সাম্প্রতিক বিধানসভার নির্বাচনে কংগ্রেসের জনমুখী প্রতিশ্রুতিগুলোকে ‘ন্যায়’ বলা হয়েছিল। আগামী ১৪ জানুয়ারি মণিপুর থেকে ভারত জোড়া যাত্রার যে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে চলেছে, তার পোশাকি নামও ‘ভারত ন্যায় যাত্রা’।  

বিচারধারার লড়াইয়ের জন্য কংগ্রেস যে প্রস্তুত, সেই ধ্বনিও জনসভার সর্বত্র অনুরণিত হয়। পোস্টার-ব্যানারে কংগ্রেসের ঘোষণা, ‘হ্যায় তৈয়ার হাম’। অর্থাৎ আমরা প্রস্তুত। লক্ষণীয়, ‘কংগ্রেস’ প্রস্তুত না বলে এই ঘোষণায় ‘হাম’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কংগ্রেস ‘ইন্ডিয়া’জোটের গুরুত্বকে স্বীকার করে নিয়েছে। দলের প্রতিষ্ঠা দিবস বলে এই জনসভা শুধু কংগ্রেসিদের জন্য হলেও শীর্ষ নেতারা জোটবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। দলের এক নেতা জানিয়ছেন, নতুন বছর থেকেই শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির আলোচনা শুরু হয়ে যাবে।

মহারাষ্ট্রের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে পরিচিত নাগপুর। এই শহরের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কও এক শ বছরের। ১৯২০ সালে এখানে কংগ্রেসের অধিবেশন থেকেই মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলের এই শহরে ১৯৫৯ সালের কংগ্রেস অধিবেশনে ইন্দিরা গান্ধী এআইসিসি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মাত্র ৪১ বছর বয়সে। জরুরি অবস্থার সময় জয়প্রকাশ নারায়ণ ‘ইন্দিরা হটাও, দেশ বাঁচাও’ ডাক দিলেও নাগপুরে দলের দুর্গ কংগ্রেস রক্ষা করেছিল। ১৯৮০ থেকে ২০১৯, এই ৪৯ বছরে বিজেপি নাগপুর লোকসভা আসন জিতেছে মাত্র তিনবার। ১৯৯৬, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে। মহারাষ্ট্র বিজেপির শীর্ষ নেতা ও রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনবিশ এই নাগপুর থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত। বিজেপির চালিকা শক্তি আরএসএসের সদর দপ্তর নাগপুর দুর্গে হানা দিয়ে কংগ্রেস চায় সংঘের বিচারধারার বাহক বিজেপিকে পরাস্ত করতে।

কংগ্রেসের ১৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের রাজধানী নাগপুরে সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের একাংশ
ছবি: এএনআই

কাজটা কঠিন ঠিকই, কিন্তু কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব বৃহস্পতিবারের জনসভায় বারবার বলেছেন, কাজটা অসম্ভব নয়। কঠিন সেই কাজে সফল হতে রাহুল ও খাড়গে যুব সম্প্রদায়, নারী, দলিত, আদিবাসী ও তফসিলভুক্ত মানুষের মঙ্গলের কথা বারবার বলেছেন। এই নাগপুরেই ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা ভীমরাও আম্বেদকর ১৯৫৬ সালে অনুগামীদের সঙ্গে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই আম্বেদকরকে স্মরণ করে কংগ্রেস নেতারা বলেছেন, বিজেপিকে না সরাতে পারলে তাঁরা আম্বেদকরের তৈরি বহুত্ববাদী সংবিধানই বদলে দেবেন। সেই প্রক্রিয়া তাঁরা শুরু করে দিয়েছেন।