ত্রিপুরার উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রসঙ্গ টানলেন মোদি

ত্রিপুরায় নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ছবি: এএনআই

ত্রিপুরায় নির্বাচনী গণসমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে কংগ্রেস ও বাম ফ্রন্টের জোটকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকারের আমলে উন্নয়নের জোয়ারে ত্রিপুরা ভেসে গেছে বলে দাবি করেন তিনি। এই উন্নয়নে বাংলাদেশের যে একটা ভূমিকা আছে, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন মোদি। একই সঙ্গে উপজাতীয় মানুষদের দল তিপ্রা মথার নাম উল্লেখ না করেও পরোক্ষভাবে তাদের আক্রমণ করেন তিনি। তারা পেছন থেকে বাম ফ্রন্ট-কংগ্রেসের জোটকে সহায়তা করছে বলে দাবি করেন মোদি।

শনিবার দুটি নির্বাচনী গণসমাবেশে এসব কথা বলেন নরেন্দ্র মোদি। ধলাই জেলার আমবাসা ও গোমতী জেলার উদয়পুরে বাম ফ্রন্ট ও কংগ্রেস জোটকে আক্রমণ করতে গিয়ে কয়েকটি বিষয় বারবার তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, ত্রিপুরায় বাম ফ্রন্টের শাসনমালে কোনো কিছু করতে গেলেই চাঁদা দিতে হতো।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘গাড়ি কিনতে গেলে চাঁদা, বাড়ি বানাতে গেলে চাঁদা, দোকান করতে গেলে চাঁদা। যা–ই করবেন দলকে টাকা দিতে হবে। চূড়ান্ত দুর্নীতির যে আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছিল, তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বিজেপির শাসনকালে। পাশাপাশি শুধু উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে ত্রিপুরাকে দেশের মানচিত্রে গৌরবের সঙ্গে তুলে ধরেছে বিজেপি।’

উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারতকে স্থলবন্দরের সঙ্গে জোড়ার জন্য জলপথ সাজানোর কাজ চলছে। বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে অতীতের তুলনায় অনেক বেশি কাজকর্ম ও আদান-প্রদান বেড়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ধীরে ধীরে আরও মজবুত হচ্ছে। ত্রিপুরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার “গেটওয়ে”তে পরিণত হচ্ছে।’ ত্রিপুরা থেকে এখন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন মোদি।

বিজেপি আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত দলীয় সমর্থকদের একাংশ
ছবি: এএনআই

২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন অর্থাৎ জাতীয় মহাসড়ক (ন্যাশনাল হাইওয়ে), ইন্টারনেট, রেল পরিষেবা নির্মাণ এবং বিমান চলাচল বাড়ানো ইত্যাদি লক্ষ্যে ত্রিপুরায় বিস্তর কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন নরেন্দ্র মোদি। বলেন, তিনি আশা করেন যে খুব শিগগিরই আগরতলা থেকে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল শুরু করবে।

জনসমাবেশে বক্তব্যের একপর্যায়ে তিপ্রা মথাদের পরোক্ষভাবে আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের কপটতা করতে কুশাসনের এই পুরোনো খেলোয়াড়েরা পিছপা হবে না। সেই কারণে তারা পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কিছু দল আছে যারা পেছন থেকে এদের মদদ দিচ্ছে। এসব দলের নাম ও স্লোগান যা–ই হোক, মনে রাখবেন এদের কাছে একেকটি ভোট যাওয়া মানে ত্রিপুরাকে আবার পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া। বিজেপি ও তাদের উপজাতীয় জোট সঙ্গী ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরাকে (আইপিএফটি) ভোট দেওয়ার আবেদন জানান তিনি।

এদিকে শনিবার ত্রিপুরায় নির্বাচনী জনসভা করেছে প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএম। এ সময় দলটির পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত বিজেপির উন্নয়ন পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। বিজেপির চাকরির প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্তরে তা পূর্ণ করতে তো পারেই নি, উপরন্তু যে চাকরি ছিল তা–ও তারা শেষ করে দিয়েছে। সব দিক দিয়ে মোদি সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’

আগামী সোমবার আবারও ত্রিপুরা সফরে আসার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।