আদানি ইস্যুতে আন্দোলনে নামছে কংগ্রেস

গৌতম আদানি ও রাহুল গান্ধী

আদানি প্রশ্নে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দেশজোড়া আন্দোলনের কর্মসূচি নিল কংগ্রেস। ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে দলের ৮৫তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের শেষ দিন গতকাল রোববার রাতে ওই কর্মসূচির কথা জানানো হয়। দলের সাংগঠনিক–বিষয়ক সাধারণ সম্পাদক কে সি বেনুগোপাল ওই কর্মসূচির কথা জানিয়ে বলেন, রাজ্যে রাজ্যে অনুষ্ঠিত ওই বিক্ষোভ সমাবেশে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন।

শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে হিনডেনবার্গ রিসার্চ শেয়ার বাজারে ‘জালিয়াতি ও কারচুপি’ করে সম্পদ বৃদ্ধির যে অভিযোগ এনেছে, তা সরাসরি বিব্রত করে তুলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। আদানির উত্থানে মোদির হাত থাকা নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ সরকার খন্ডাতে পারছে না। সংসদে সরাসরি আক্রমণ করা হলেও প্রধানমন্ত্রী একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। এক মাস কেটে গেলেও সরকার একটি অভিযোগেরও উত্তর দেয়নি।

এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস মনে করছে, আদানিকে হাতিয়ার করে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি রাজনৈতিক আক্রমণ হানা হবে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। রায়পুরের মহা অধিবেশনে রাহুলের ভাষণও ছিল আদানি ও মোদিময়। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, মোদি ও আদানি এক। এই আখ্যানকেই অন্যতম প্রধান নির্বাচনী ইস্যু করতে চাইছে কংগ্রেস। সেই কারণে দেশজোড়া আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা।

বেনুগোপাল জানিয়েছেন, মোদি-আদানি সম্পর্ক দেশের অর্থনীতির কী ক্ষতি করেছে, কীভাবে আদানির বিভিন্ন সংস্থায় লগ্নিতে বাধ্য করিয়ে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব জীবন বিমা করপোরেশন (এলআইসি) ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, রাজ্যে রাজ্যে একেবারে ব্লকপর্যায় পর্যন্ত সেই প্রচার কংগ্রেস করবে। আগামী মার্চের ৬ থেকে ১০ তারিখ দেশব্যাপী ওই প্রচারাভিযানে অংশ নেবেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। জেলায় জেলায়, রাজ্যে রাজ্যে সংবাদ সম্মেলন করা হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ও এলআইসি অফিসের সামনে করা হবে বিক্ষোভ সমাবেশ। প্রতি রাজ্যের রাজধানীতে ‘রাজভবন চলো’ অভিযান হবে ১৩ মার্চ, যেদিন সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের শুরু। দিল্লিতেও সেদিন সংসদ অভিযান কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।

আদানি ইস্যুকে কংগ্রেস জিইয়ে রাখতে চাইছে, কারণ, তারা মনে করছে এর মধ্য দিয়ে ‘মোদি-আদানি অনৈতিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের পর্দাফাঁস’ করা সম্ভবপর। লোকসভায় রাহুল গান্ধী যেসব প্রশ্ন রেখেছিলেন, সেসব প্রশ্ন এই আন্দোলনে কংগ্রেস তুলে ধরবে। যদিও সভার কার্যবিবরণী থেকে অধিকাংশ প্রশ্ন বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কংগ্রেস প্রমাণ করতে চাইবে, আদানি গোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর পদমর্যাদার অপব্যবহার করেছেন।

পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব খাটিয়েছেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। সংসদের ভাষণে রাহুল এই প্রসঙ্গে সরাসরি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার নাম করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, আদানিকে বানিজ্যিক সুবিধা পাইয়ে দিতে তিনি এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ওপর অন্যায় প্রভাব খাটিয়েছিলেন।

মার্চের পর আগামী এপ্রিলজুড়েও কংগ্রেস এই আন্দোলন চালাবে। কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। রাজ্যস্তরের সব শাখাকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

কংগ্রেসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হিনডেনবার্গ রিপোর্ট মোদি-আদানির ঘনিষ্ঠ সাহচর্য ও বন্ধুতোষণের মধ্য দিয়ে স্বজনতোষীপুঁজিবাদ (ক্রোনি ক্যাপিটালিজম) নীতির মুখোশ খুলে দিয়েছে। দেশের গভীর অর্থনৈতিক সংকটের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো তুলে দিয়েছেন আদানির হাতে। আদানির স্বার্থে তিনি পররাষ্ট্রনীতিকে ব্যবহার করেছেন। এলআইসি ও স্টেট ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থায় সঞ্চিত জনগণের টাকা আদানি গোষ্ঠীতে জোর করে লগ্নিতে বাধ্য করেছেন। জনগণকে ফেলে দিয়েছেন আর্থিক ঝুঁকির মুখে।

হিনডেনবার্গের রিপোর্টের ফলে গত এক মাসে আদানির সম্পদের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমে গিয়েছে। প্রতিটি সংস্থার শেয়ার মূল্য কমে গিয়েছে। দ্বিতীয় সেরা ধনী থেকে গৌতম আদানি নেমে এসেছেন ৩০তম স্থানে।