মণিপুরে সহিংসতায় তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে

ভারতের সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি: এএফপি

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে গণহত্যায় সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের হাত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (সিএফএসএল) প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে বলে সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে।

কুকি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান ট্রাস্ট নামে কুকি জনজাতির একটি সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছে, বীরেন সিং-এর ‘গলার স্বরের’ একটি রেকর্ড তাদের কাছে এসেছে, যা তারা সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছেন।

ওই গলার স্বর বীরেন সিংয়ের দাবি করে কুকি সংগঠনটি বলেছে, এটি প্রমাণ করছে যে কুকিবিরোধী যে জঙ্গি তৎপরতা মণিপুরে তৈরি হয়েছে, তার সঙ্গে বীরেন সিংয়ের ‘সম্পৃক্ততা রয়েছে।’

প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের একটি বেঞ্চকে কেন্দ্রের পক্ষের আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছেন, আবেদনকারী কুকি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান ট্রাস্টের হস্তান্তর করা সব কণ্ঠস্বরের নমুনা সিএফএসএলে পাঠানো হয়েছে।

২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে চলা মেইতেই সম্প্রদায় এবং কুকিসহ অন্যান্য জনজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে আড়াই শর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, গৃহহীন হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে এই সংঘর্ষ চললেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একবারও মণিপুর সফর করেননি। এটি রাজ্যে বিরোধী দল কংগ্রেসের এখন প্রধান ইস্যু। এই ইস্যু ও জাতিগত দাঙ্গাকে সামনে রেখে গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে মণিপুরের দুটি আসনের মধ্যে দুটিই পেয়েছে কংগ্রেস।

আবেদনকারী কুকি সংগঠনের পক্ষে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতকে জানিয়েছেন, ‘গলার স্বর বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে, এই গলা ওনারই (বীরেন সিং)।’

ভূষণ আদালতকে বলেন, গলার স্বর মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ৯৩ শতাংশ মিলে গিয়েছে। দক্ষিণ ভারতের হায়দরাবাদের একটি সংস্থা ‘ট্রুথ ল্যাবস’ এই বিশ্লেষণ করেছে।

ভারতের সরকারি ফরেনসিক ল্যাবরেটরির বাইরে ‘ট্রুথ ল্যাবস’ বেসরকারি স্তরে ফরেনসিক পরীক্ষা করে। সেখানে বীরেন সিংয়ের গলার স্বর ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত মিলে যাওয়ার পরে এখন তা সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।

তুষার মেহতা অবশ্য ভূষণের বক্তব্য খারিজ করানোর দাবি তুলে বলেছেন, ‘ট্রুথ ল্যাবস’ একটি বেসরকারি ও ব্যক্তিগত সংস্থা। এ প্রসঙ্গে আদালতকে অবশ্য জানানো হয়, বিভিন্ন আদালতে ‘ট্রুথ ল্যাবস’–এর দাখিল করা প্রমাণ ব্যাপকভাবে অতীতে গৃহীত হয়েছে।

এরপরে মেহতা বলেন, সরকার সেই ব্যক্তিদেরও অনুরোধ করেছে, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠস্বর প্রকাশ করেছেন। কণ্ঠস্বরের মূল রেকর্ডিং জমা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি খান্না বলেন, ‘দয়া করে এসব পরীক্ষা করে দেখুন।’

কুকি সংগঠনটির পক্ষে আরেক আইনজীবী শেরিল ডি’সুজা অভিযোগ করেন, ‘মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী মণিপুরের কুকি-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হত্যা, ধ্বংস এবং অন্যান্য সহিংসতার উসকানি দিয়েছেন। তারপর হিংসাত্মক কার্যকলাপ ছড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন।’