মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ আইন বাতিল করল আসাম

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাছবি: এএনআই

ভারতের বিজেপি শাসিত আসামে হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার গতকাল শুক্রবার রাতে আসামের মুসলমান বিবাহ ও বিচ্ছেদ নথিভুক্তকরণ আইন (১৯৩৫) বাতিল করেছে। রাজ্যের এক মন্ত্রী জয়ন্ত মল্লবরুয়া বলেছেন, এই আইন খারিজের মাধ্যমে রাজ্যে সবার জন্য এক আইনের লক্ষ্যে ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালুর দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল রাজ্য সরকার।

এত দিন সংশোধিত আইনে মুসলিম নিবন্ধকের (রেজিস্ট্রার) মাধ্যমে মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদের নিবন্ধন করা হতো। ১৯৩৫ সালের মুসলমান বিবাহ আইন বাতিলের ফলে মুসলমান বিবাহ ও বিচ্ছেদ নথিভুক্ত করতে এখন আর নিবন্ধক বা কাজির প্রয়োজন হবে না।

জয়ন্ত মল্লবরুয়া বলেন, সব মুসলমান বিবাহ-সম্পর্কিত বিষয় এখন বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে পরিচালিত হবে। বর্তমানে আসামে যে ৯৪ জন কাজি রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে এককালীন দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

আসামে কয়েক মাস আগে অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের বিবাহ করার অভিযোগে প্রধানত সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের পুরুষদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মুসলমান বিবাহ আইন খারিজের ফলে রাজ্যে বাল্যবিবাহ কমবে বলেও মন্তব্য করেন মল্লবড়ুয়া।

ভারতে যে বিশেষ বিবাহ আইন (স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট) রয়েছে, তার অধীনে সব সম্প্রদায়ের জন্য একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও আইনি বৈবাহিক কাঠামো (অভিন্ন দেওয়ানি বিধি) দেশজুড়ে চালু করা উচিত বলে বিজেপি মনে করে। এই আইনের অধীনে পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ হওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এই আইনের বিরোধীদের বক্তব্য, এর ফলে নির্দিষ্ট উপজাতি, জাতি ও ধর্মের মানুষের নিজস্ব সাংস্কৃতিক, বৈবাহিক এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি বণ্টনের স্বাধীনতায় হাত পড়বে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ‘এক দেশ এক পারিবারিক আইনের’ পথে হাঁটলেও বিভিন্ন আদিবাসী ও হিন্দু সমাজের মধ্যেও নানা বিপরীতমুখী আইন প্রচলিত রয়েছে। যেমন ভারতের আদিবাসীদের একটা বড় অংশ এখনো বহুগামিতা এবং বহুবিবাহে বিশ্বাসী। বহুবিবাহ করার ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব এবং মধ্য ভারতের একাধিক আদিবাসী সমাজকে ছাড় দেওয়া হলেও মুসলমান সমাজকে তা দিতে রাজি নয় সরকার।

ধীরে ধীরে বিভিন্ন রাজ্যে ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে বিজেপি শাসিত উত্তরাখন্ড রাজ্যে এই আইন চালু করা হয়েছে। উত্তরাখন্ডই ভারতে প্রথম অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করেছে। এ নিয়ে এখনো বড় ধরনের কোনো প্রতিবাদ ভারতে লক্ষ করা যায়নি।

১৯৮০ সালে দল গঠনের পর থেকেই বিজেপি সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার কথা বলে আসছে। বর্তমানে সব রাজ্যের ওপর বিজেপির নিয়ন্ত্রণ নেই বলে বিজেপি শাসিত রাজ্যে প্রথমে এই আইন চালু করা হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন।