ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যে বিক্ষোভ দানা বেঁধেছিল, তা আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা আবার ধর্মঘট শুরু করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, তাঁদের অভিযোগ, চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে দেশটির বিচার বিভাগ যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাই রাজ্যের ২৩টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা ধর্মঘট পালন করছেন।
গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় একজন নারী চিকিৎসক ধর্ষণের পর খুন হন। এ ঘটনার পর উত্তাল হয়ে ওঠে আর জি করসহ রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল। তীব্র আন্দোলন শুরু করেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা দাবি তোলেন, হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ দাবি নিয়ে শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, প্রতিবাদ–আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআই গ্রেপ্তার করে হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষসহ সংশ্লিষ্ট টালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিজিৎ মণ্ডলকে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকেও বদলি করা হয়। এরপর সরকারের সঙ্গে চিকিৎসকদের দাবিদাওয়া নিয়ে বৈঠকের পর ২১ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহার করে কাজে ফেরেন চিকিৎকেরা। তবে তাঁদের বাকি দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন চলমান ছিল।
এরই মধ্যে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার একটি হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর জেরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে সেখানে ধর্মঘট শুরু হয়।
গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে আর জি কর নিয়ে হওয়া স্বতঃপ্রণোদিত মামলার পঞ্চম দফার শুনানি শেষ হয়। এ শুনানি গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ। শুনানিতে অংশ নেন মামলার ৪২টি পক্ষ এবং দুই শতাধিক আইনজীবী।
শুনানি শেষে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট আবার ধর্মঘট ডাকে। প্রায় সাত হাজার চিকিৎসকের এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা আদালতের সিদ্ধান্তে নাখোশ। তাই বাধ্য হয়ে আবার কর্মবিরতিতে যেতে হচ্ছে তাদের। সংবাদ সম্মেলন করে তারা জানায়, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ১০ দফা দাবি নিয়ে আজ থেকে রাজ্যের ২৩টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফের কর্মবিরতি শুরু করছে।
গতকাল ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট জানায়, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার ও ভয়ের রাজনীতি দূর করা হবে, ততক্ষণ আমাদের ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।’
রয়টার্স জানায়, চিকিৎসকদের দাবির মধ্যে রয়েছে হাসপাতালে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বাড়ানো, মেডিকেল কলেজগুলোর দুর্নীতির তদন্ত করা।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি–শাসিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে যৌন নিপীড়নের অপরাধ বিচারের জন্য দ্রুত নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠনে ধীরগতিতে কাজ করেছে। এখন পর্যন্ত এ রাজ্যে মাত্র ছয়টি ট্রাইব্যুনাল চালু রয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ১২৩টি দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।