কাশ্মীরে হামলা: কেবল সন্দেহের বশে কাশ্মীরের আরও দুই ব্যক্তির বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পেহেলগামের অপরাধীদের ‘কল্পনাতীত শাস্তি’ দেওয়ার অঙ্গীকার ঘোষণার পর উপত্যকায় শুরু হয়ে গেছে ক্ষমতাসীন বিজেপির ‘বুলডোজার নীতি’। ২২ এপ্রিলের সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুলিতে ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় কুশীলবদের একজনকেও ধরতে না পারলেও জম্মু–কাশ্মীর প্রশাসন গতকাল শুক্রবার থেকে সন্দেহভাজনদের ঘরবাড়ি ভাঙতে শুরু করেছে। শুক্রবার দুটি বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আজ শনিবারও বুলডোজার চালিয়ে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে আরও দুই সন্দেহভাজনের বাড়ি।
কাশ্মীর উপত্যকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর মোকাবিলায় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর এই কৌশল একেবারেই নতুন। এতকাল নানাভাবে চিরুনি তল্লাশি চালানো হয়েছে। সন্দেহভাজনদের আটক করে জেরা করা হয়েছে। কিন্তু স্রেফ সন্দেহের বশে কারও বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়নি। বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র বা গুজরাটের ‘বুলডোজার নীতি’ এবার চালু হয়ে গেল কেন্দ্রশাসিত জম্মু–কাশ্মীরেও।
দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় যে দুই বাড়ি শনিবার ভেঙে দেওয়া হয়—তার একটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে, অন্যটি বুলডোজার চালিয়ে। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, সেই দুই বাড়ি ছিল পেহেলগামে চিহ্নিত দুই ‘জঙ্গির’।
২২ এপ্রিল পেহেলগামে নরসংহারের পর কাশ্মীর প্রশাসন যে জঙ্গিদের স্কেচ প্রকাশ করেছিল, তাদের দুজনের বাড়ি শুক্রবার ধূলিসাৎ করা হয়। সরকারিভাবে বলা হয়েছে, ওই দুই অপরাধীর একজন আসিফ শেখ, অন্যজন আদিল হুসেন ঠোকর। আদিলের বাড়ি শুক্রবার দিবাগত রাতে বিস্ফোরণে উড়ে যায়। আসিফের বাড়িতে বুলডোজার চালানো হয়।
আজ শনিবার কুলগামে যাঁর বাড়িতে বুলডোজার চালানো হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর বয়ান অনুযায়ী তাঁর নাম জাকির আহমেদ গনি। সরকারের দাবি, ওই তরুণ পেহেলগামের ঘটনায় সরাসরি যুক্ত না থাকলেও তিনি ছিলেন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেপথ্য সহযোগী। পর্যটকদের ওপর হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। ঘটনার পরপরই তিনি গা ঢাকা দেন।
পুলওয়ামায় বুলডোজার চালিয়ে বাড়ি ভেঙে হয়েছে আরেক সন্দেহভাজন ব্যক্তির। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, তাঁর নাম আহসান আল শেখ।
বিজেপিশাসিত রাজ্যে বুলডোজার নীতির বিরুদ্ধে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একাধিকবার মন্তব্য করেছেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা হলেও কোনো স্থাপনা ভেঙে দেওয়ার আগে সরকার বা প্রশাসনকে আইন মানতে হবে বলেও সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশ রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসনকে তীব্র ভর্ৎসনা করা হয়েছে। ভাঙচুরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
পেহেলগামের ঘটনার পর জম্মু–কাশ্মীরের বুলডোজার নীতির বিরুদ্ধে তেমন কোনো নির্দেশ এখনো নেই। স্রেফ সন্দেহের বশে বাড়ি ভাঙার যৌক্তিকতাও এখনো প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। বস্তুত, যাঁদের বাড়ি ভাঙা হয়েছে, সেই পরিবারের কারো কোনো প্রতিক্রিয়াও সর্বভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। জম্মু–কাশ্মীরের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কতখানি, সেই প্রশ্ন প্রায়ই আলোচনায় উঠে আসে।
পেহেলগামের হামলার ঘটনার পর যাঁদের স্কেচ প্রকাশ করা হয়েছিল, ঘটনার চার দিন পরও তাঁরা অধরা। গত শুক্রবার ভারতের সেনাপ্রধান জম্মু–কাশ্মীর সফর করেন। সে সময় নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি শুরু হয়। শনিবার দিবাগত রাতেও গোলাগুলি হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযোগ, পাকিস্তানি বাহিনী সীমান্তে প্রথম গুলি চালিয়েছে। পেহেলগামে হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সীমান্ত পেরোতে সাহায্য করতে তারা ওই গুলি চালাচ্ছে কি না, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী তা খতিয়ে দেখছে। পাশাপাশি নানাজনকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করা হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাতভর অভিযানের পর আজ শনিবার ভোরে কুলগামের কাইমো এলাকার ঠোকরপোরা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হামলাকারীদের সাহায্য করেছিলেন বলে সন্দেহ। জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ অবশ্য সন্দেহভাজন কারও সম্পর্কেই বাড়তি কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না। যদিও কেবল সন্দেহের বশে বিনা দ্বিধায় ও বাধায় বুলডোজার চালিয়ে বাড়ি ভাঙা অব্যাহত রয়েছে।