পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত

ভারতের আম্বালা বিমানঘাঁটিতে রাফাল যুদ্ধবিমান। ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ফ্রান্স থেকে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে ভারত। কয়েক শ কোটি ডলারের এই চুক্তিতে একক ও দুই আসনের যুদ্ধবিমান রয়েছে। সোমবার এক বিবৃতিতে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

ভারতের হাতে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান রয়েছে। নতুন ২৬টি এলে দেশটির রাফাল যুদ্ধবিমানের বহর আরও শক্তিশালী হবে। নিজেদের সামরিক সরঞ্জাম দ্রুত আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ফ্রান্স থেকে এসব যুদ্ধবিমান কিনছে নয়াদিল্লি।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভারত ও ফ্রান্স সরকার ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে একটি চুক্তি সই করেছে। এই ২৬টি যুদ্ধবিমানের অর্থমূল্য প্রায় ৭৪০ কোটি ডলার।’

রাফাল যুদ্ধবিমানগুলো তৈরি করেছে ফরাসি মহাকাশ সংস্থা দাসোঁ এভিয়েশন। এগুলো ভারতের নিজেদের তৈরি বিমানবাহী রণতরি থেকে পরিচালিত হবে। রাশিয়ার মিগ-২৯কে যুদ্ধবিমানের জায়গায় নতুন রাফাল যুদ্ধবিমানগুলো যুক্ত হবে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চুক্তির আওতায় প্রশিক্ষণ, সিমুলেটর, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, অস্ত্র ও কার্যক্ষমতাভিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নতুন ২৬টি যুদ্ধবিমানের যার ২২টি একক আসনের ও ৪টি দুই আসনের। চুক্তির আওতায় ইতিমধ্যে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএই) হাতে থাকা রাফাল যুদ্ধবিমান বহরের জন্য অতিরিক্ত সরঞ্জামও সরবরাহ করা হবে।

২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাস্তিল দিবস উদ্‌যাপনে ফ্রান্স সফরকালে ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

সামরিক সরঞ্জামের মূল সরবরাহকারী হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এনেছে। দেশটি এখন ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল থেকেও সামরিক সরঞ্জাম কিনছে।

দাসোঁ এভিয়েশন বলেছে, রাফাল যুদ্ধবিমান ভারতকে ‘সর্বাধুনিক সক্ষমতা’ দেবে এবং ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা’ রাখতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের অবস্থান আরও দৃঢ় করবে।

ফরাসি কোম্পানিটি জানিয়েছে, ফ্রান্সের বাইরে ভারতের নৌবাহিনীই প্রথম রাফাল মেরিন জেটের ব্যবহারকারী হতে যাচ্ছে।

ভারতে বিক্রি করা রাফাল যুদ্ধবিমানগুলো তৈরি করেছে ফরাসি প্রতিষ্ঠান দাসোঁ এভিয়েশন। সংস্থাটির লোগো
ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা

রাফাল কেনার এই চুক্তি এমন এক সময় হয়েছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নতুন করে তলানিতে ঠেকেছে। ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ পর্যটক। নয়াদিল্লির অভিযোগ, হামলার সঙ্গে ইসলামাবাদ জড়িত। ইসলামাবাদ তা নাকচ করে আসছে। উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এরপর থেকে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।

পেহেলগাম হামলার পর থেকে সোমবার পর্যন্ত চার দিন দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই সংকট সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

ভারত ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করে। তখন ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের অর্থমূল্য ছিল প্রায় ৯৪০ কোটি ডলার।

বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার এবং পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারতকে অনেক বৈশ্বিক অস্ত্র সরবরাহকারী গুরুত্বপূর্ণ বাজার মনে করে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্যমতে, ২০১৯-২৩ সালে ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ অস্ত্র আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। এই সময়ে বৈশ্বিক মোট অস্ত্র আমদানির প্রায় ১০ শতাংশই করেছে ভারত।

উত্তরের প্রতিবেশী চীন নিয়েও ভারতের উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে ২০২০ সালে দুই দেশের প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘাতের পর থেকে এই উদ্বেগ বেড়েছে।

চীনের সঙ্গে ওই সংঘাতের পর ব্যাপকভাবে প্রতিরক্ষা খাত সংস্কার শুরু করে ভারত। এসব সংস্কারের মধ্যে বিদেশি সরবরাহকারীদের সঙ্গে নতুন চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং দেশীয় ও যৌথভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করতে আইন সহজ করা হয়।

চলতি দশকে ভারত নতুন করে ব্যয়বহুল হেলিকপ্টার কারখানা চালু করেছে। এরই মধ্যে প্রথম নিজস্ব নির্মিত বিমানবাহী রণতরি উদ্বোধন করেছে এবং একটি দূরপাল্লার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।

এর ফলে ভারতের অস্ত্র রপ্তানির বাজারও গড়ে উঠেছে। গত বছর ভারত প্রায় ২৬৩ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে। এর মধ্য দিয়ে এক দশকে দেশটির সামরিক সরঞ্জাম ৩০ গুণ বেড়েছে। যদিও মোট রপ্তানির পরিমাণ এ খাতে সুপ্রতিষ্ঠিত দেশগুলোর তুলনায় সামান্য।

সম্প্রতি ভারত পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর করেছে। কৌশলগত নিরাপত্তা সংলাপ কোয়াডের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি। ভারত ছাড়া কোয়াডের অন্য সদস্যদেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া।