জন্মু-কাশ্মীরে ভোটার তালিকায় অস্থানীয়রাও, ক্ষুব্ধ সব দল

জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা রদ করে ভারত সরকার। জম্মু-কাশ্মীর ভেঙে দ্বিখণ্ডিত করা হয়।
শ্রীনগর, কাশ্মীর, ১১ অক্টোবর। ছবি: রয়টার্স

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের অস্থায়ী বাসিন্দাদের ভোটাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নামল উপত্যকার সব দল। রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি এই ‘কেন্দ্রীয় চক্রান্তের’ বিরুদ্ধে কর্তব্য স্থির করতে প্রবীণ রাজনীতিক ফারুক আবদুল্লাহকে দ্রুত সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার শ্রীনগরে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিজেপিকে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় আনতে এটা কেন্দ্রের সর্বশেষ ‘ঘৃণ্য চক্রান্ত’। পিডিপির মতো ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিপলস কনফারেন্স, সিপিএমসহ উপত্যকার সব রাজনৈতিক দলই এই কেন্দ্রীয় উদ্যোগের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছে।

তিন বছর আগে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছিল। পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে পৃথক দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়। সেই সঙ্গে খারিজ করা হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ, যা ওই রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল। তারও এক বছর আগে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল বিধানসভা। এই চার বছর ধরে কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে থাকা জম্মু-কাশ্মীরে ভোট গ্রহণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সে জন্য প্রথমে বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রের পুনর্বিন্যাস ঘটানো হয়। এখন চলছে নতুন ভোটার তালিকা তৈরির কাজ। গত বুধবার সেই প্রসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক হৃদেশ কুমার সিং সাংবাদিকদের জানান, নতুন তালিকায় ২৫ লাখ নতুন ভোটারের নাম নথিভুক্ত হবে। জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা যাঁরা নন, যাঁরা চাকরি বা পড়াশোনা কিংবা ব্যবসার জন্য এখানে বাস করছেন অথবা অস্থায়ী শ্রমিক, তাঁরাও ভোটার হতে পারবেন। তিনি বলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের পর ভোটারদের রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও চলবে। তবে সে ক্ষেত্রে অস্থায়ী নাগরিকেরা অন্য রাজ্যের ভোটার থাকতে পারবেন না। নিজ রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ দিতে হবে।

মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক জানান, চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রতিটি কেন্দ্রের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তাতে নতুন নাম তোলা বা বাদ দেওয়া সম্পর্কিত যাবতীয় ওজর-আপত্তি জানানো যাবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সব বিধানসভা কেন্দ্রের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে।

বিজেপি ছাড়া জম্মু-কাশ্মীরের সব রাজনৈতিক দল কেন্দ্রের এই নবতম উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে। বিজেপি বলেছে, এতে জম্মু-কাশ্মীরে গণতন্ত্র বিকশিত হবে। শুধু অস্থায়ী বাসিন্দারাই নন, নিরাপত্তারক্ষীরাও ভোট দেওয়ার অধিকারী হবেন। কিন্তু বাকি সব দল এর বিরোধিতা করেছে।

ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ টুইট করে জানতে চান, স্থায়ী ভোটারদের সমর্থন পাবে না বলেই কি বিজেপি অস্থায়ীদের ওপর ভরসা করছে? তিনি বলেন, ‘মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে এসব কিছুই কাজে লাগবে না।’ পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি এই উদ্যোগকে ‘ঘৃণ্য চক্রান্ত’ বর্ণনা করে বলেন, ‘বিজেপি স্থানীয় মানুষদের দাবিয়ে রেখে শাসন করতে চায়। নাৎসিরা জার্মানিতে যা করেছিল কিংবা ফিলিস্তিনের হাল যেমন, বিজেপি ঠিক সেভাবে জম্মু-কাশ্মীর শাসন করতে চাইছে। সে জন্য পেছনের দরজা দিয়ে তারা ২৫ লাখ নিজেদের ভোটার আমদানি করতে চাইছে। গণতন্ত্র বিপদের মুখে।’ সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামি বলেন, কাশ্মীরি জনগণের ওপর এ এক নির্লজ্জ আক্রমণ। জম্মু-কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্স দলের সভাপতি সাজ্জাদ লোন বলেন, এটা ভয়ংকর হবে। এমন হলে ১৯৮৭ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। বিজেপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দয়া করে এই ঝুঁকি নিতে যেয়ো না। ১৯৮৭ সালের ক্ষত এখনো সারেনি।’ ১৯৮৭ সালে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার নির্বাচন ছিল কারচুপির চূড়ান্ত নিদর্শন।

জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় মুসলমানপ্রধান উপত্যকার প্রভাব কমিয়ে হিন্দু-অধ্যুষিত জম্মুর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। সে জন্য গঠিত কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করেছে। তাতে বিধানসভার মোট আসন ৮৩ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০। এই বাড়তি ৭ আসনের ৬টি গেছে জম্মুতে, উপত্যকায় ১টি। এর ফলে জম্মুর মোট আসন ৩৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৩, কাশ্মীর উপত্যকার ৪৭। জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে আগে আসনের ফারাক ছিল ৯। নতুন ব্যবস্থায় তা কমে হবে ৪। জম্মুভিত্তিক দল বিজেপি মনে করছে, আসনের ফারাক কমিয়ে ও সীমানা পুনর্বিন্যাসের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে জিতে তাদের পক্ষে ক্ষমতায় থাকা সম্ভবপর হবে। তা নিশ্চিত করতেই অস্থায়ী বাসিন্দা ও নিরাপত্তারক্ষীদের ভোটাধিকার দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত।