বাংলাদেশে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প নিয়ে মামলা পশ্চিমবঙ্গের হাইকোর্টে

প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পটির বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। মামলা করেছেন মুর্শিদাবাদ জেলার ৩০ জন কৃষক এবং মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটস (এপিডিআর)। গতকাল মঙ্গলবার মামলাটি করা হয়েছে।

আদানির বিরুদ্ধে মামলাটি হাইকোর্টে হলো এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কারচুপিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ জানিয়েছে, আদানি গোষ্ঠী ‘শেয়ারবাজারে কয়েক যুগ ধরে অর্থনৈতিক কারচুপি করেছে’। তাদের এই প্রতিবেদনের কারণে শেয়ারবাজারে আদানি গোষ্ঠীর সব সংস্থার শেয়ারের দাম মোটামুটিভাবে কমেছে। সংস্থার প্রধান গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদও কমেছে। বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় তিনি তিন থেকে এগারোয় চলে গিয়েছেন।

আরও পড়ুন

ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানোর জন্য ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলায় আদানি গোষ্ঠী ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বানিয়েছে। এ প্রকল্প ‘আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল-বেজড পাওয়ার প্ল্যান্ট’, অর্থাৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিয়ে ঝাড়খন্ডের পরিবেশবিদেরা অতীতে প্রশ্ন তুলেছেন।

গোড্ডা থেকে বিদ্যুৎ মুর্শিদাবাদের ফারাক্কাসহ উত্তর–পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যাবে। এর জন্য অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের তার ফারাক্কা জেলার কিছু গ্রামের ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা এবং চেষ্টা করেছে আদানির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহকারী সংস্থা।

বিষয়টি নিয়ে ফারাক্কায় বড় সংঘর্ষ–সংঘাত হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে। ফারাক্কার বেনিয়াগ্রাম ও ইমামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা প্রধানত বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা আদানির প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেন। বিক্ষোভকারীরা প্রথম আলোকে সে সময় বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি, এ কারণে তাঁরা কাজ করতে দেবেন না। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যুব কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা আসিফ ইকবাল। সে সময় তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় কিছু নেতা–কর্মীও এ বিক্ষোভে অংশ নেন এবং আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বেশ কিছু কর্মীকে হেনস্তা করেন। পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা দেয়।

আরও পড়ুন

যুব কংগ্রেস নেতা আসিফ ইকবাল সে সময় বলেছিলেন, বিদ্যুতের তার বসতবাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে ভবিষ্যতে দোতলা বাড়ি করা যাবে না, ফলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গ্রামবাসীর বক্তব্য ছিল, আদানি গোষ্ঠী তাদেরই ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে যােদর বাড়ির ওপর দিয়ে তার যাচ্ছে। আম ও লিচুবাগানের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার গেলেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। ঘটনার জেরে ফারাক্কায় বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তাজপুরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর করার কথা আদানি গোষ্ঠীর। কয়েক বছর আগে ২০১৭ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ে বিদ্যুতের ‘হাই টেনশন’ তার বসানোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন সেখানকার কৃষক ও বাসিন্দারা। আন্দোলনে কয়েকজন মারা যান, কাজ পিছিয়ে যায়।

আরও পড়ুন