কেজরিওয়াল ভোটের পুরোটা সময় বন্দীই থাকতে পারেন

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আদালত থেকে বেরিয়ে আসছেন
ফাইল ছবি: এএনআই

ভারতে লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জামিন পাবেন কি না, সেই সন্দেহ ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে। আর কারাবন্দী এই নেতা যে প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে দেশের কোথাও প্রচারে যেতে পারছেন না, সেটা নিশ্চিত।

আবগারি (মদ) নীতি মামলায় কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার বেআইনি দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল গত সপ্তাহে। আজ সোমবার ছিল শুনানি। আজ সুপ্রিম কোর্ট কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার নিয়ে কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) প্রতিবেদন চেয়েছেন। ২৭ এপ্রিলের মধ্যে সেই প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২৯ এপ্রিল।
বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপংকর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চে আজ ওই মামলার শুনানি হয়। শুনানিতে সময় কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, নির্বাচনী প্রচার থেকে দূরে রেখে বিপক্ষকে (বিজেপিবিরোধী) দুর্বল করতেই কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেটা করা হয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি জারি থাকা সত্ত্বেও।

ইডি এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে জানায়, আবেদন এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে মনে করা যেতে পারে গ্রেপ্তার বাতিলের জন্য নয়, এটা জামিনের আবেদন। সিংভি আগামী শুক্রবার আবার শুনানির দিন ধার্য করার অনুরোধ জানালে বিচারপতিরা বলেন, এত দ্রুত দিন ফেলা যাবে না।

ভারতে সাত ধাপে লোকসভা ভোট শুরু হচ্ছে ১৯ এপ্রিল থেকে। দ্বিতীয় দফায় ভোট ২৬ এপ্রিল। এই দুই ধাপে কেজরিওয়াল দেশের কোথাও প্রচারে যেতে পারছেন না, এটা নিশ্চিত। কারণ, ২৯ এপ্রিলের আগে সুপ্রিম কোর্টে তাঁর মামলা উঠছে না। কেজরিওয়ালের দল দিল্লি ও পাঞ্জাবে ক্ষমতায় আছে। লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির ৭ আসনের ভোট ষষ্ঠ দফায়, ২৫ মে। পাঞ্জাবের ১৩ আসনের ভোট শেষ দফায়, ১ জুন। সুপ্রিম কোর্ট সহায় হলে জামিন পেয়ে এই দুই ভোটে কেজরিওয়াল প্রচার করতে পারবেন। কিন্তু সেটাও আদৌ সম্ভবপর হবে কি না, সে বিষয়ে আম আদমি পার্টির মধ্যেই ঘোর সংশয় দেখা দিয়েছে।

সংশয় জন্মেছে ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) নেত্রী কবিতাকে দেখে। এই একই মামলায় ইডি কবিতাকে গ্রেপ্তার করেছিল কেজরিওয়ালের আগেই। গত ১৫ মার্চ। আদালতের নির্দেশে তিনি তিহার কারাগারেই বন্দী। ইডি গ্রেপ্তারের পর এক মাসের মাথায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)। আম আদমি পার্টির কোনো কোনো নেতা মনে করছেন, ভোটে কেজরিওয়াল যাতে প্রচারকাজে নামতে না পারেন, দল যাতে ছন্নছাড়া হয়ে যায়, সে জন্য ইডির করা মামলায় জামিন পেলেও সিবিআই ওই এক মামলায় তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করবে। ফলে তাঁকে দীর্ঘকাল কারাগারে থাকতে হবে।

আম আদমি পার্টির একটি সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, বিজেপি কোনোভাবেই তাঁদের নেতাকে দিল্লি ও পাঞ্জাবে প্রচারে নামতে দিতে চান না। সিবিআই চাইলে ইডির সঙ্গেই জেরা করতে পারে। কিন্তু তা করবে না। পৃথক মামলা হলে বন্দিত্বের মেয়াদ বেড়ে যায়।
আবগারি মামলায় ১০০ কোটি রুপির দুর্নীতির অভিযোগ আনলেও টাকা লেনদেনের কোনো অকাট্য প্রমাণ ইডি এখনো দাখিল করতে পারেনি। বরং আম আদমি পার্টি দেখিয়ে দিয়েছে, এই মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত সরথ রেড্ডি কীভাবে দফায় দফায় সাড়ে ৫৯ কোটি রুপির নির্বাচনী বন্ড কিনে বিজেপিকে দিয়েছে। তারপর জামিন পেয়েছে ও পরবর্তী সময়ে রাজসাক্ষী হয়েছে।

এই মামলায় এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে আম আদমি পার্টির কেজরিওয়াল, সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া, রাজ্যসভার সদস্য সঞ্জয় সিং ও বিআরএস নেত্রী কবিতাকে। একমাত্র সঞ্জয় সিং জামিন পেয়েছেন। বাকিরা কারাগারে আছেন।