ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে ‘টিম ইন্ডিয়া’কে নিয়ে যে বার্তা দিতে চাইল কংগ্রেস

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে ভারতের সাফল্য কামনা করে সর্বস্তরীয় শুভেচ্ছার মধ্যে কংগ্রেস সবাইকে ভারতের প্রকৃত সত্তা, তার চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ও জাতির সংজ্ঞাটুকু মনে করিয়ে দিল। কংগ্রেসের বিশেষ লক্ষ্য দেশের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে কারও নাম উচ্চারণ না করে তারা জানাল, ‘টিম ইন্ডিয়া, এটাই আমাদের দেশের প্রকৃত সত্তা।’

আগামীকাল রোববার গুজরাটের আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে এক দিনের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ম্যাচ চলাকালে উপস্থিত থাকবেন। বিশ্ব ক্রিকেটের বিভিন্ন ফরম্যাটে ভারত এযাবৎ যে কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল ছিল কংগ্রেস। এই প্রথম মোদি জমানার কাছে সেই সাফল্য অর্জনের সুযোগ এসেছে।

সুযোগটা হারাতে চায় না গোটা দেশ। সব মহল থেকেই তাই শুভেচ্ছা বার্তার ঢল নেমেছে। এর মধ্যেই কংগ্রেস তার বার্তায় প্রচ্ছন্নভাবে তুলে এনেছে সমকালীন রাজনীতি। টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে জুড়ে তারা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, এই একাত্মতা ও ঐকবদ্ধতাই ভারতের প্রকৃত সত্তা।

সামাজিক মাধ্যম এক্সে আজ শনিবার কংগ্রেস সেই বার্তায় জুড়ে দিয়েছে দেশের মানচিত্রও। এই ভারতীয় দলে কোন রাজ্য থেকে কোন খেলোয়াড় প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেই তালিকা তুলে ধরার পাশাপাশি কংগ্রেস লিখেছে, ‘বিভিন্ন প্রদেশ, ভিন্ন ভিন্ন ভাষা, নানান ধর্ম অথচ অবিচল, অটল, অচঞ্চল টিম ইন্ডিয়া। এটাই আমাদের দেশের প্রকৃত সত্তা।’

কংগ্রেস বারবার বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে, দেশের এই বৈচিত্র্যপূর্ণ ঐক্যবদ্ধ চরিত্র তারা ধ্বংস করে দিচ্ছে। হিন্দুত্ববাদের প্রসারের মধ্য দিয়ে নষ্ট করতে চাইছে সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের সনাতনী চেতনা। কায়েম করতে চাইছে একদর্শী, এক মতাবলম্বী শাসন, যা কিনা হিন্দুরাষ্ট্রেরই নামান্তর। এর বিরুদ্ধে কংগ্রেসসহ অন্যান্য বিরোধী দল গড়ে তুলেছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। ‘টিম ইন্ডিয়া’কে সেই আলোয় আলোকিত করার প্রচ্ছন্ন প্রচেষ্টা কংগ্রেসের এই বার্তার মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে।

সে কারণে এক্সের ওই বার্তার সঙ্গে কংগ্রেস জুড়ে দিয়েছে দেশের মানচিত্র। কোন রাজ্য থেকে কারা এই ‘টিম ইন্ডিয়ার’ সদস্য, খেলোয়াড়দের ছবিসহ সেই তালিকাও ওই বার্তায় জ্বলজ্বল করছে। পাঞ্জাব থেকে শুবমান গিল, দিল্লির বিরাট কোহলি, উত্তর প্রদেশের মোহাম্মদ শামি ও কুলদীপ যাদব, বিহারের ঈশান কিষান, গুজরাটের রবীন্দ্র জাদেজা, হার্দিক পান্ডিয়া ও যশপ্রীত বুমরা, তেলেঙ্গানার মোহাম্মদ সিরাজ, তামিলনাড়ুর রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কর্ণাটকের কে এল রাহুল ও প্রসিধ কৃষ্ণা এবং মহারাষ্ট্র থেকে শার্দূল ঠাকুর, সূর্যকুমার যাদব, শ্রেয়াস আইয়ার ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা।

বিশ্বকাপ ফাইনালকে কেন্দ্র করে এক্স মারফত কংগ্রেস আরও অনেক খুদে বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে। সেসব বার্তার মধ্য দিয়েও প্রচ্ছন্নভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, এক দিনের ক্রিকেটে যে দুবার ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, প্রথমবার ১৯৮৩ ও দ্বিতীয়বার ২০১১—দুবারই দেশের ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। ১৯৮৩ সালে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, ২০১১ সালে মনমোহন সিং। ২০০৭ সালে ভারত বিশ্ব টি-২০ চ্যাম্পিয়ন হয় কংগ্রেস আমলে। ২০১৩ সালে এককভাবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয় করেছিল ভারত। সেটাও ছিল কংগ্রেস জমানায়।

বিজেপি জমানায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি যুগ্মভাবে জিতেছিল ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ২০০২ সালে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ী। মোদি জমানায় ২০২১ ও ২০২৩ সালে বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে দুবারই ভারত রানার্সআপ হয়। আগামীকাল রোববার অপরাজিত থেকে ভারত চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে তা হবে অভিনব। নিজের নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে বসে সেই দৃশ্য উপভোগ করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গোটা দেশ উন্মুখ।