২০১৬ সালে নিয়োগ হওয়া ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করে কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হবে।
আজ সোমবার সকালে কলকাতা হাইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরিকে অবৈধ ঘোষণা করে ওই চাকরি বাতিল ঘোষণা করেন।
এই রায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ‘এখন তো এখানের বিচারালয় বিজেপির বিচারালয় হয়ে গেছে। দিল্লির দপ্তর থেকে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিচার হয়। আমরা আজকের রায়কে অবৈধ মনে করি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওরা জেলে পাঠাবে, আমি তৈরি। আমি হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করছি। আমি চাকরিহারাদের পাশে আছি। আমার যত দূর যেতে হয় যাব। ওরা আমায় জেলে পাঠাবে? আমি তৈরি। ’
অন্যদিকে এই রায় নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি ও বর্তমানে লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক আসনের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মমতার সরকার চুরি করেছে, ধরা পড়েছে, বিচার পেয়েছে। আমি এই জোচ্চোর সরকারের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলাম, আমি এই রাজ্যের অন্ধকার সুড়ঙ্গ শেষে কখন আলো দেখতে পারব? মমতার সরকার জোচ্চোর সরকার, দুর্নীতিবাজদের সরকার, মিথ্যাচারী সরকার। এ মুহূর্তে মমতার এই রাজ্যপাট থেকে পদত্যাগ করা উচিত। রাজ্যের যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাতে এই রাজ্যে রাস্ট্রপতি শাসনের দরকার।’
অন্যদিকে তৃণমূলের সংসদ সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আজকের রায়ে সন্তুস্ট হতে না পেরে বলেছেন, ‘আমরা ৫ মিনিটেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে স্টে অর্ডার পেয়ে যাব।’ আর এই রাজ্যের বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘আজকে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে হাইকোর্টের রায় নজিরবিহীন। আইন আইনের পথেই চলবে। মমতা আজ এই রায়ে হতাশ হয়ে ওই সব কথা বলেছেন।’
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে হাইকোর্টে দায়ের করা ১১২টি মামলা একত্র করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আজ এই রায় দিয়েছেন। তবে সোমা দাস নামের একজন শিক্ষক ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর চাকরি বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
২০১৬ সালে ৩০ লাখ আবেদনকারীর মধ্য থেকে রাজ্য সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক এবং গ্রুপ সি ও ডি শ্রেণিভুক্ত আবেদনকারীদের মধ্যে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনকে নিয়োগ দেয়। অভিযোগ রয়েছে, রাজ্য সরকার ঘুষের বিনিময়ে ও প্রার্থীদের উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট জাল করে চারটি স্তরে চাকরি দেয়। এই নিয়োগপ্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ জালিয়াতিতে ভরা।