রাজনীতি ছাড়ার হুমকি পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাবেক সভাপতি দিলীপ ঘোষের

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সাবেক সভাপতি দিলীপ ঘোষছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে জনপ্রিয় নেতাদের একজন দিলীপ ঘোষ। ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি। তবে এবার দলের ওপর চটেছেন দিলীপ। দল ও রাজনীতি ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একাধিক সাক্ষাৎকারে দিলীপ বলেন, ‘দলে পদহীন অবস্থায় আমি এভাবে থাকতে পারবো না। আমার জন্য নির্দিষ্ট কাজ না থাকলে রাজনীতি থেকে বিদায় নেব।’

বিজেপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আরও কিছুদিন অপেক্ষা করবো। তবে আমার সহ্যেরও একটা সীমা আছে।’

এক সময় দিলীপ ঘোষের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভায় ১৮টি ও বিধানসভায় ৭৭টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। বিজেপির ইতিহাসে পশ্চিমবঙ্গে দলটির এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। 

দিলীপবিরোধী শিবিরের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিরলস প্রচারণার কারণে এমন সাফল্য পেয়েছিলেন দিলীপ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কাঙ্ক্ষিত ফল করতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু এবারও মোদি পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েকবার প্রচারে এসেছিলেন। সেই সুফল ঘরে তুলতে পারেনি দলটি। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনীতি এভাবে চলতে থাকলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আসন আরও কমতে পারে।

এবারের লোকসভা নির্বাচনের পর দিলীপ ঘোষ বলেছেন, তাঁকে হারাতে গিয়ে রাজ্যে অন্তত তিনটি আসন হারিয়েছে বিজেপি। নিজের জেতা আসন মেদিনীপুর থেকে তাঁকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল বর্ধমান-দুর্গাপুরে। ফলে মেদিনীপুর আসন বিজেপি হারিয়েছে। উপরন্তু হারিয়েছে দুর্গাপুর আসনও। কারণ সেখানে নতুন একজন প্রার্থী হিসেবে বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি দিলীপ।

আরও পড়ুন

এছাড়া আসানসোল আসনে অগ্নিমিত্রা পাল আগেও ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। এবার তিনি সেখান থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে পরিশ্রম করেছিলেন। অথচ তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দিলিপের আসন মেদিনীপুরে। অগ্নিমিত্রা হেরে যান।

অর্থাৎ, দিলীপের মতে, তিনটি আসন থেকে তাঁকে সরাতে গিয়ে সবগুলোয় বিজেপি হেরে গেছে। আর কয়েক বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ‘সবচেয়ে সফল’ বিজেপি নেতা দিলীপ তাঁর সবকটি পদ হারিয়েছেন। প্রথমে রাজ্য সভাপতির পদ। তারপরে কেন্দ্রীয় স্তরের পদ। অবশেষে লোকসভা সদস্যের পদও।

এর কারণ, রাজ্য বিজেপিতে দিলীপের সঙ্গে বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভ্যন্তরীণ কোন্দল। সুকান্ত-শুভেন্দু গোষ্ঠী দিলীপকে হারাতে তৎপর।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে রয়েছে একাধিক প্রশ্ন। বিজেপির ভেতরেই অনেকের বক্তব্য যে, শুভেন্দু একাধিক দুর্নীতির মামলায় জড়িত।

কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শুভেন্দুকে মমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মুখ করে তুলেছিল বিজেপি। যে কারণে এবারের লোকসভা নির্বাচনে দলটির আসন ১৮ থেকে কমে ১২ হয়েছে। রাজ্যে সুকান্ত-শুভেন্দু গোষ্ঠী কট্টরভাবে দিলীপ–বিরোধী। তবে দিলীপের বিরুদ্ধে বিশেষ কোনো দুর্নীতির অভিযোগ এখনো নেই।