‘ভারতরত্ন’ বাড়ল ভারতে, নেপথ্যে ভোটের রাজনীতি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক্স হ্যান্ডলে এম এস স্বামীনাথনের ভারতরত্ন পাওয়ার কথা জানানো হয়ছবি: নরেন্দ্র মোদির ‘এক্স’ থেকে নেওয়া

ভোটের আগে ‘ভারতরত্ন’ প্রাপকদের তালিকা আরও বাড়ল। আজ শুক্রবার ভারতের এই সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান দেওয়া হলো দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও ও চৌধুরী চরণ সিংকে। তাঁদের সঙ্গেই এই সম্মান পেলেন কিংবদন্তি কৃষিবিজ্ঞানী দেশের সবুজ বিপ্লবের জনক এম এস স্বামীনাথন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার ‘এক্স’ হ্যান্ডলে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

গত এক মাসে এই সর্বোচ্চ সম্মান প্রথম দেওয়া হয় বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অনগ্রসর নেতা প্রয়াত কর্পূরী ঠাকুরকে। সেই ঘোষণার পরই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএতে যোগ দেন জেডিইউ নেতা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এবার চরণ সিংকে ভারতরত্ন দেওয়ার পর ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে এনডিএতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে চরণ সিংয়ের নাতি রাষ্ট্রীয় লোকদল নেতা (আরএলডি) জয়ন্ত চৌধুরীর। পশ্চিম উত্তর প্রদেশের এই জাট নেতা এত দিন ধরে রাজ্যস্তরে জোটবদ্ধ ছিলেন অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে। রাষ্ট্রীয় স্তরে তিনি ছিলেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক। চরণ সিংকে ভারতরত্ন দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে জয়ন্ত ‘এক্স’–এ লেখেন, ‘মন জিতে নিয়েছেন।’

ইন্দিরা গান্ধীর শাসনের অবসান ঘটিয়ে জনতা পার্টি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হয় ১৯৭৭ সালে। মোরারজি দেশাই মন্ত্রিসভায় চরণ সিং ছিলেন অন্যতম প্রধান মুখ। মোরারজি সরকারের পতনের পর ১৯৭৯ সালের জুলাই মাস থেকে ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দেশের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চরণ সিং দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর পুত্র অজিত সিং বারবার জোট সঙ্গী বদল করে গেছেন। জয়ন্ত চৌধুরী এই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম। তিনিও সেই পথে এগোচ্ছেন। কখনো কংগ্রেস, কখনো সমাজবাদী পার্টি, কখনো দুই দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছেন, ছেড়েছেনও। এবার তাঁকে কাছে পেতে বিজেপি মরিয়া। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে উত্তর প্রদেশে বিজেপি যে ১৬টি আসনে হেরেছিল, সেগুলোর ৬টি পশ্চিম উত্তর প্রদেশে, যেখানে আরএলডির প্রভাব অনস্বীকার্য। জয়ন্তর দলকে কাছে টেনে বিজেপি সেই ঘাটতি মেটাতে চাইছে।

গত জানুয়ারির ২২ তারিখে অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের রেশ থাকতে থাকতে ভারতরত্ন দেওয়া হয় নব্বইয়ের দশকে বিজেপির ‘লৌহপুরুষ’ বলে পরিচিত লালকৃষ্ণ আদভানিকে। নবতিপর ওই নেতাই ছিলেন রাম মন্দির আন্দোলনের জন্মদাতা। মন্দির উদ্বোধনে তাঁকে ‘যেতে না দেওয়ার’ সমালোচনা ঠেকাতে ওই খেতাব দেওয়া হলো কি না, তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত। এক মাসের মধ্যে তৃতীয় দফায় আরও তিনজনকে ভারতরত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনেও রাজনীতিই প্রধান কারণ। ভোটের আগে আরও কেউ কেউ এই সম্মান পাবেন কি না, সেই রাজনৈতিক জল্পনাও শুরু হয়ে গেছে।

রাজনীতিক নরসিমা রাও ও কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথনকে ভারতরত্ন দেওয়ার কারণও দাক্ষিণাত্যের ভোট। নরসিমা রাও অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনীতিক। সেই রাজ্য অবিভক্ত থাকার সময় লোকসভার মোট আসন ছিল ৪২। ভাগাভাগির পর এখন অন্ধ্রপ্রদেশে ২৯, তেলেঙ্গানায় ১১টি আসন। আগামী লোকসভায় বিজেপির লক্ষ্য ৪০০ আসন। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে দাক্ষিণাত্যের ১৩০ আসনে ভালো ফল করা প্রয়োজন। সে জন্য বিজেপি ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তামিলনাড়ুর মন জিততে সোনার রাজদণ্ড ‘সেঙ্গল’ স্থাপন করা হয়েছে নতুন সংসদ ভবনে। এআইএডিএমকে দলে ভাঙন ধরিয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে তারা জোট বাঁধতে চলেছে তেলেগু দেশম পার্টির সঙ্গে। কর্ণাটকে বিপর্যয়ের পর তারা আগেই জোট বেঁধেছে স্থানীয় দল জেডিএসের সঙ্গে। এবার দাক্ষিণাত্যের মন জিততে ভারতরত্ন দেওয়া হলো নরসিংহ রাও ও স্বামীনাথনকে। নতুন তিনজনই এই খেতাব পেলেন মরণোত্তর।

নরসিমা রাওকে এই সম্মান দেওয়া কংগ্রেসকেও এক বার্তা। রাও ছিলেন কংগ্রেস দলের নেতা। তাঁর আমলেই অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু। তার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন মনমোহন সিং, পরে দীর্ঘ ১০ বছর যিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।