রাজস্থানে গরু পাচারের সন্দেহে তরুণকে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ গোরক্ষকদের দিকে

হত্যাপ্রতীকী ছবি

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের ভিলওয়াড়ায় গত সপ্তাহে গরু পাচারের সন্দেহে পিটিয়ে এক তরুণকে হত্যা করা হয়েছে। তথাকথিত গোরক্ষকেরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। ওই তরুণের নাম শেরু সুসাদিয়া (৩২)। তিনি মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌর এলাকার বাসিন্দা।

ভিলওয়াড়া পুলিশ জানিয়েছে, তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, স্বেচ্ছায় আঘাত করা, বেআইনিভাবে আটকে রাখা, চাঁদাবাজি ও বেআইনি সমাবেশের অভিযোগে ভারতীয় ন্যায়সংহিতার (বিএনএস) ধারায় একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া গরু পাচারের অভিযোগে আলাদা একটি মামলাও করা হয়েছে।

মামলার বাদী মনজুর পেমলা (৩৬) বলেন, তাঁর চাচাতো ভাই শেরু সুসাদিয়া ও মহসিন দোল (৩৪) ১৬ সেপ্টেম্বর ভিলওয়াড়ার লাম্বিয়া পশুর হাট থেকে একটি ষাঁড় কিনেছিলেন। তাঁরা ষাড়টি একটি ট্রাকে করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। রাত প্রায় তিনটার দিকে রুপালি রঙের একটি ক্যাম্পার গাড়ি তাঁদের পিছু নেয়।

মনজুর বলেন, একপর্যায়ে গাড়িটি তাঁদের ট্রাকের সামনে গিয়ে পথ আটকে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মোটরসাইকেলে করে আরও কয়েক তরুণ সেখানে এসে পৌঁছান।

মনজুর অভিযোগ করেন, ওই ব্যক্তিরা তাঁদের দুজনকেই গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে ‘তোরা গরু জবাই করিস’ বলে মারধর শুরু করেন। শেরু ও মহসিন তাঁদের বারবার বলছিলেন, তাঁরা হাট থেকে গৃহপালিত পশুটি কিনেছেন। কিন্তু হামলাকারীরা তাঁদের কোনো কথা শোনেননি।

বাদীর অভিযোগ, দেবা গুর্জর, কুনাল মালপুরা, প্রদীপ রাজপুরোহিত, নিতেশ সাইনিসহ অন্যরা দুজনকে মারধর করতে থাকেন। তবে মহসিন কোনোভাবে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হন।

এফআইআরে মনজুর আরও অভিযোগ করেন, ‘হামলাকারীরা শেরুকে মারধর করেন এবং তাঁর কাছে থাকা ৩৬ হাজার রুপি ছিনিয়ে নেয়। ভোর সাড়ে তিনটার দিকে কুনাল নামের একজন শেরুর ফোন থেকে আমার কাছে কল করেন। ওই ব্যক্তি বলেন, শেরুকে জীবিত দেখতে এবং পুলিশের ঝামেলা এড়াতে চাইলে ৫০ হাজার রুপি নিয়ে আসতে হবে। নতুবা কাউকে দিয়ে ওই অর্থ পাঠাতে হবে।’

একপর্যায়ে শেরুর ফোন বন্ধ হয়ে যায়। সকালে তাঁর পরিবার শেরু ও ট্রাকটির সন্ধান করেও খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়। মনজুর বলেন, ‘বেলা তিনটার দিকে বানেরা থানা থেকে আমাদের ফোন করে জানানো হয়, ভিলওয়াড়া হাসপাতালে শেরু ভর্তি। তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছে। আমরা সেখানে পৌঁছানোর আগেই তাঁকে আবার জয়পুরে স্থানান্তর করা হয়।’

চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন দিন পর গত শুক্রবার শেরু মারা যান। ভিলওয়াড়ার সরকারি হাসপাতাল থেকে জয়পুরের এসএমএস হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে শেরুকে স্থানান্তরের জন্য দেওয়া ছাড়পত্রে ‘মাথায় আঘাত’-এর কথা উল্লেখ করা ছিল।

শেরুর পরিবারে তাঁর স্ত্রী নাসিম এবং দুই শিশু সন্তান রয়েছে। তাঁর এক আত্মীয় ফারুক বলেন, ‘পুলিশ যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলেছে জানিয়েছে, তাঁরা আসল অপরাধী কি না, তা আমরা নিশ্চিত নই। আমরা সব অপরাধীর গ্রেপ্তার এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা তাঁর শিশু সন্তানদের জন্য ক্ষতিপূরণ চাই। তার ওপর নির্ভরশীল দুটি বোনও রয়েছে।’

ভিলওয়াড়া পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে। গরু পাচারের অভিযোগে আরেকটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। দুটি মামলারই তদন্ত চলছে।

এ বিষয়ে জানতে পুলিশ সুপার (এসপি) ধর্মেন্দ্র সিংয়ের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।