পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালীর আলোচিত সেই শাহজাহান গ্রেপ্তার

নির্যাতনের অভিযোগে শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে নারীরা জুতা নিয়ে মিছিল করেনছবি: এএনআই

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালী থেকে গতকাল বুধবার রাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন সেখানে ঘটে যাওয়া সহিংসতার প্রধান অভিযুক্ত শাহজাহান শেখ। রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের এই নেতা এবং তাঁর সহকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষের ওপর অত্যাচার থেকে জমি দখল ও নারীদের নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। যেহেতু কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী নয়, রাজ্য পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করেছে, তাই বিষয়টিকে তৃণমূলের বড় সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্ব। দলের অন্যতম প্রধান নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, আদালত রাজ্য পুলিশের হাত-পা বেঁধে রেখেছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেই শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারে রাজ্য পুলিশ। এরপর আদালত জানিয়েছিলেন, শাহজাহান শেখকে গ্রেপ্তার করায় কখনোই হাইকোর্টের কোনো আপত্তি ছিল না। আদালতের এই বক্তব্যের দিন কয়েকের মধ্যেই গ্রেপ্তার হলেন শাহজাহান শেখ।

কলকাতাসংলগ্ন মিনাখা অঞ্চল গ্রেপ্তার হয়েছে শাহজাহান শেখ। একসময় সিপিআইএম দলের সঙ্গে যুক্ত শাহজাহান সন্দেশখালী ব্লকে প্রধানত জমি ও মাছের ভেড়ির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন, যা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় রাজনৈতিক নেতা থেকে অপরাধজগতের অনেকেই করে থাকে। ধীরে ধীরে তাঁর উত্থান হয় এবং অবশেষে তৃণমূল কংগ্রেসের একজন স্থানীয় নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। মাস দুয়েক আগে যখন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ওই অঞ্চলে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে যায়, তখন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে—এ আশঙ্কায় সরকারি অফিসারদের ওপর চড়াও হয় স্থানীয় মানুষ। তাঁদের মারধর করা হয়। ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক স্তরে বড় আকার ধারণ করে। জাতীয় স্তরেও এটিকে একটি বড় ঘটনা বলে বর্ণনা করতে থাকে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার প্রচারমাধ্যম। বিজেপি নেতারা সেখানে নিয়মিত যেতে শুরু করেন এবং তাঁদের আটকানো হলে এ নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলনের পথে যায় বিজেপি। প্রায় রোজই বিজেপি নেতারা সন্দেশখালী এবং সংলগ্ন অঞ্চলে যাচ্ছেন এবং বিষয়টিকে নির্বাচনের আগে একটি বড় ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা করছেন।

এরই মধ্যে তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তাঁদের কাজকর্মে বাধার সৃষ্টি করেছেন কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্য পুলিশকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে দেওয়ার ওপর নিষেধ আরোপ করেছেন হাইকোর্ট। তিনি বলেন, ‘শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাঁকে ধরতে পারেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গিয়ে রাজ্য পুলিশের ওই এফআইআরের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। ফলে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছেন আদালতই।’ এর উত্তরে আদালত বলেন, শাহজাহান শেখকে গ্রেপ্তারের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, কেন্দ্রীয় বা রাজ্য পুলিশ, যে কেউই তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারে।

প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের মন্তব্য, ‘স্পষ্টভাবে বলছি, পুলিশকে কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ইডির মামলায় বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশকে বলিনি যে গ্রেপ্তার করা যাবে না।’ প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার হলেন শাহজাহান শেখ। আজ বৃহস্পতিবারই তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে। তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশি রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানাবে রাজ্য পুলিশ।

বিষয়টিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের বড় সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত করে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে অযথা রাজনীতি করা হচ্ছিল এবং আদালতের অনুমতি থাকলে আগেই সন্দেশখালী এই অভিযুক্ত দুষ্কৃতকারীকে গ্রেপ্তার করা যেত। মনে করা হচ্ছিল, বিষয়টি নিয়ে রাজ্য বিজেপি আগামী অন্তত সাত দিনে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলবে। এর কারণ, আগামী ৬ মার্চ রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এক দিন পশ্চিমবঙ্গে থাকবেন। কার্যত, তাঁর নির্বাচনী সফর শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহ থেকে। এর মধ্যে সন্দেশখালীর ঘটনাকে আরও বড় করে প্রচারে আনতে পারলে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে একটি নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে তুলে ধরতে পারতেন। কিন্তু তিনি রাজ্যে আসার আগেই শাহজাহানের শেখের গ্রেপ্তারের কারণে সেই সম্ভাবনা রইল না।

যদিও বিষয়টি ইতিমধ্যেই একটি আলোচ্য বিষয় হিসেবে সামনে এসেছে এবং বিজেপি আগামী দিনে এটি নিয়ে আন্দোলন চালানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়ায় এটি অতীতে সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামের মত বড় আন্দোলনের রূপান্তরিত হবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা।