মণিপুরে আবারও হামলা, আহত ১৬

গত ৩ মে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুরে সংঘাত শুরু হয়
ফাইল ছবি: এএনআই

সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর শান্তি বজায় রাখার আহ্বান সত্ত্বেও ভারতের মণিপুরে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। শুক্রবার রাত ও শনিবার ভোরে ইম্ফল পশ্চিম জেলার ফায়েং এবং কাংচুপ চিংখং নামে দুটি গ্রামে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নিশিকান্ত সিং গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ সন্দেহভাজন কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই আক্রমণ চালিয়েছে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের পাহাড়ে হটিয়ে দিতে সক্ষম হন।

এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে ইম্ফল পূর্ব জেলার আন্দ্রো থানার কাছে ইয়াইরিপোক এনগারিয়ানে উত্তেজিত জনতা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ডন বসকো প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ক্যাথলিক মিশন দ্বারা পরিচালিত এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ফাদার জোসেফের দাবি, সম্পত্তিটি নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য ব্যবহার করা হবে এমন গুজব ছড়ানো হয়। পরে প্রায় তিন হাজার লোক প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা চালায়।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সপ্তাহেই চার দিন মণিপুরে ছিলেন। সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তিনি শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত থেকে শান্তি কমিটি গঠন বা অস্ত্র প্রত্যর্পণের জন্য তিনি আবেদন জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি সব পক্ষকে অন্তত ১৫ দিনের জন্য শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন।

কিন্তু বৃহস্পতিবার অমিত শাহ দিল্লি ফিরে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটল মণিপুরে। এই ঘটনা প্রমাণ করছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্র সরকারকে আরও অনেক চেষ্টা করতে হবে।

এদিকে মণিপুরের সাধারণ মানুষ বলছেন, রাজ্যে এখনো ব্যাপক চাপা উত্তেজনা রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষ হচ্ছে। মানুষ মারাও যাচ্ছে। কিন্তু সে খবর স্থানীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলেও রাজ্যের বাইরে থেকে জানা যাচ্ছে না। অমিত শাহ থাকার সময়েও সংঘর্ষ হয়েছে, কিন্তু তা প্রকাশিত হয়নি বলেও মেইতেই ও কুকি দুই সম্প্রদায়ের মানুষ জানিয়েছেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য মণিপুর হাইকোর্ট সুপারিশ করার পর ৩ মে থেকে সহিংসতা চলছে। এতে নষ্ট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। ঘরবাড়ি ছেড়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও।

সরকারি হিসাবে, এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা সহিংসতায় ১০৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যদিও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, ১১৫ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হবে। এ ছাড়া প্রায় ৩০০ গির্জা পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।