রাজ্যসভার ভোটের পর আমেথি ও রায়বেরিলিতে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা কি প্রার্থী হবেন

রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের রাজ্যসভা ভোটে বিরোধীদের ঘর ভাঙিয়ে বিজেপি নিজের শক্তি আরও বাড়ানোর পাশাপাশি অনিশ্চিত করে দিল উত্তর প্রদেশের আমেথি ও রায়বেরিলিতে কংগ্রেসের ভাগ্য। শুধু তা–ই নয়, উত্তর ভারতের একমাত্র কংগ্রেসশাসিত রাজ্য হিমাচল প্রদেশও বিজেপি ছিনিয়ে নিতে তৎপর। সেখানে রাজ্যসভার আসনে কংগ্রেসের পরাজয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুর গদি টলমলে। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছে বিজেপি।

ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে এবার ভোট হয় মোট ৫৬ আসনে। তার মধ্যে ৪১ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। গতকাল মঙ্গলবার ভোট হয় উত্তর প্রদেশের ১০, কর্ণাটকের ৪ ও হিমাচল প্রদেশের ১টি আসনে। বিধানসভায় দলীয় প্রার্থীদের সংখ্যার নিরিখে ভোট হলে ফল যা হতো, বিজেপি তা উল্টে দিল উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেসের ভোট ভাঙিয়ে। ফলে দুটি বাড়তি আসন তারা জিতে যায়।

হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেসের নিশ্চিত জেতা আসন ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তারা উত্তর প্রদেশে এসপি বিধায়কদের দলে টেনে একটি বাড়তি আসন জিতেছে। যেখানে এসপির জয় নিশ্চিত ছিল তিনটি আসনে, সেখানে তারা জিতল দুটি। বিজেপি সাত আসনের জায়গায় আটটি আসনে জয়ী হলো। ফলে রাজ্যসভায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএর গরিষ্ঠতা পেতে আর বাকি থাকল মাত্র চারটি আসন।

কংগ্রেসশাসিত কর্ণাটকেও বিজেপি-জেডিএস জোট এভাবে বাড়তি একটি আসন জেতার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সেই রাজ্যে কংগ্রেস বরং বিজেপির ঘর ভেঙে দিয়েছে। বিজেপির দুই বিধায়কের একজন কংগ্রেসের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, অন্য একজন কাউকে ভোট না দিয়ে কংগ্রেসকে সাহায্য করেছেন।

রাজ্যসভার ভোট অনিশ্চিত করে তুলেছে উত্তর প্রদেশের আমেথি ও রায়বেরিলিতে কংগ্রেসের নির্বাচনী ভাগ্য। এ দুই আসন কংগ্রেসের হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনে আমেথিতে কংগ্রেসের প্রার্থী রাহুল গান্ধীকে হারিয়ে দেন বিজেপির স্মৃতি ইরানি। রায়বেরিলিতে ১ লাখ ৬০ হাজার ভোটে সোনিয়া গান্ধী জিতলেও রাজ্যসভার ভোটের পর এ দুই লোকসভা আসনের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে, সেটাই এ মুহূর্তের বড় রাজনৈতিক জল্পনা।

আমেথি ও রায়বেরিলিতে এসপি কখনো কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি; তা কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোট থাকুক বা না থাকুক। এবার অনেক টানাপোড়েনের পর উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস ও এসপি আসন সমঝোতায় পৌঁছেছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক হিসেবে এসপি এবার কংগ্রেসকে ১৭টি আসন ছেড়েছে। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায়যাত্রায় এসপি নেতা অখিলেশ যাদব অংশও নিয়েছেন। আমেথিতে রাহুল এবার স্মৃতি ইরানিকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন কি না, সেই জল্পনাও শুরু হয়েছে।

পাশাপাশি এমন একটা ধারণাও তৈরি হয়েছে, সোনিয়ার রায়বেরিলিতে এবার হয়তো প্রার্থী করা হতে পারে তাঁরই কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রকে। রাজ্যসভার ভোটের অপ্রত্যাশিত ফলের পর কংগ্রেসে শুরু হয়েছে নতুন চিন্তা। কারণ, বিজেপি পরিকল্পিতভাবে ওই দুই লোকসভা আসনে এসপি ও কংগ্রেসের স্থানীয় নেতাদের দলে টেনে নিজেদের জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে তুলেছে।

গত মঙ্গলবার রাজ্যসভার ভোটে এসপির আট বিধায়ক হয় সরাসরি বিজেপির প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, তা না হলে অনুপস্থিত থেকেছেন। ওই আট বিধায়কের তিনজন আমেথি ও রায়বেরিলির। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তিনবারের বিধায়ক মনোজ পান্ডে। বিধানসভায় তিনি ছিলেন এসপির চিফ হুইপ। রায়বেরিলির উঁচাহার আসন থেকে জিতে তিনি বিধায়ক হয়েছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার থেকেই শুরু নতুন জল্পনা, কংগ্রেসের হার নিশ্চিত করতে রায়বেরিলিতে বিজেপি এবার মনোজকে প্রার্থী করবে। ১৯৯৮ সালের পর এই আসনে বিজেপি কখনো জেতেনি।

মনোজ পান্ডেকে দলে টানার আগে রায়বেরিলি লোকসভা আসনের অন্তর্গত রায়বেরিলি (সদর) ও হরচাঁদপুর থেকে ২০১৭ সালে নির্বাচিত দুই কংগ্রেসি বিধায়ক অদিতি সিং ও রাকেশ সিংকে বিজেপি দলে টেনেছিল। ২০২২ সালে ভোটে তাঁরা ওই দুই আসনে বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হয়ে কংগ্রেসের প্রার্থীদের হারিয়েও দেন। এবার মনোজ পান্ডেকে দলে টেনে এসপির প্রভাবও বিজেপি কমিয়ে দিল। এসপির কমজোরি হওয়ার অর্থ কংগ্রেসেরও দুর্বল হওয়া।

কংগ্রেসের এই হাল বিজেপি করেছে আমেথিতেও। ওই লোকসভা আসনের অন্তর্গত গৌরীগঞ্জ ও আমেথি বিধানসভা আসন থেকে জেতা এসপি বিধায়ক রাকেশ প্রতাপ সিং ও মহারাজি প্রজাপতি বিজেপিকে এবার ভোট দিয়েছেন।

রাকেশ বলেছেন, তিনি অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে ভগবান রামচন্দ্রের নামে ভোট দিয়েছেন। আমেথি ও রায়বেরিলিতে এসপির ভোট বরাবর কংগ্রেস প্রার্থীদের পক্ষে গেছে। দুর্বল কংগ্রেস এবার কার ভরসায় ওই দুই কেন্দ্র থেকে লড়বে?

আমেথির সংসদ সদস্য স্মৃতি ইরানি এবারও রাহুলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রেখেছেন। কিছুদিন আগেও কংগ্রেসের একাংশ সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে উৎসুক ছিল। গত লোকসভা ভোটে আমেথিতে হারলেও কেরালার ওয়েনাড থেকে রাহুল জিতেছিলেন। এবারও সেখান থেকে তাঁর দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক সিপিআই এবার সেই কেন্দ্র থেকে তাদের প্রার্থীর নাম জানিয়ে দিয়েছে। সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী অ্যানি রাজা প্রার্থী।

অ্যানির সমর্থনে সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাত বলেছেন, ‘উনি নারী আন্দোলনকর্মী। বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে চলেছেন। কংগ্রেসও বলছে, তাদের লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে। ওদের ভেবে দেখা দরকার, রাহুলকে ওয়েনাড থাকে দাঁড় করাবে কি না।’

জাতীয় পর্যায়ে কংগ্রেস ও বামপন্থীরা জোটবদ্ধ হলেও কেরালায় তারা প্রতিদ্বন্দ্বী।

রাজ্যসভা ভোটের মধ্য দিয়ে বিজেপি ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে শুধু আরও দুর্বলই করল না, লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসসহ অন্য শরিকদেরও চিন্তায় ফেলে দিল।