মণিপুরে সংঘাতে নিহত ২, পুলিশপ্রধানের দপ্তরে হামলা

মণিপুরের চুরাচাঁদপুর শহরের বিক্ষোভকারীরা একটি পানির ট্যাংকে আগুন ধরিয়ে দেন। গত বছরের আগস্টে তোলাছবি: রয়টার্স

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মণিপুরের চুরাচাঁদপুর এসপি (পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট) অফিসে ৩০০ থেকে ৪০০ স্থানীয় বাসিন্দা হামলা চালিয়েছেন বলে মণিপুর পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে অন্তত ২ ব্যক্তি নিহত ও ৩০ জন আহত হন।

এ ঘটনার কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে যে বিষয়টিকে মণিপুর পুলিশ উল্লেখ করেছে, সেটি হলো জেলা পুলিশের একজন হেড কনস্টেবলের ব্যবহার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিওতে প্রথমে দেখা যায় সিয়ামলালপল নামের ওই হেড কনস্টেবল সশস্ত্র কিছু ব্যক্তি এবং গ্রাম স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বসে রয়েছেন। রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে এটি একটি গুরুতর গাফিলতি’।

এই ঘটনার জেরে চুরাচাঁদপুরের এসপি শিবানন্দ সুরভে হেড কনস্টেবল সিয়ামলালপলকে ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বরখাস্ত করেছেন বলে রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্তের কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। সিয়ামলালপলের জীবিকা ভাতা বহাল রাখা হলেও বেতন ও অন্যান্য ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। সিয়ামলালপলের এলাকা ছাড়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

যাঁদের সঙ্গে ওই হেড কনস্টেবলকে ঘুরতে দেখা গেছে, তাঁরা সংখ্যাগুরু মেইতেই সমাজের প্রতিনিধি। ফলে ধরে নেওয়া হয় তিনি তাঁর সমাজের সঙ্গে ওঠা-বসা শুরু করেছেন। যা পুলিশ হিসেবে তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। স্বাভাবিক সময়ে এটি কোনো বড় ঘটনা না হলেও বর্তমানে মণিপুরে স্থানীয় পুলিশকে সশস্ত্র ও বেসরকারি ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখতে পাওয়া একটি নিয়মবিরুদ্ধে কাজ বলে জানিয়েছে মণিপুর পুলিশ।

এ ঘটনার পর ‘৩০০ থেকে ৪০০ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি এসপি অফিসে প্রবেশের চেষ্টা করেন এবং তাঁরা পাথরও নিক্ষেপ করেন’ বলেও জানানো হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশ বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে এবং স্থানীয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে, গুলিও চালায়। এর জেরে অন্তত ১ ব্যক্তি মারা যান ও ৩০ জন আহত হন। পরিস্থিতির ওপর তাদের নজর রয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য পুলিশ।

মণিপুরে ২০২৩ সালের মে মাস থেকে জাতিগত হিংসার কারণে দুই শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২০ জনের। এখনো প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয়শিবিরে রয়েছেন। সরকারের সাম্প্রতিক আরও কিছু সিদ্ধান্তের কারণে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব মণিপুরের কিছু মিয়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে।