বাম-কংগ্রেস জোট কি তৃণমূলের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ফাইল ছবি

তিন দশকের বেশি সময়ের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন দলটির শীর্ষ নেতারা জোর গলায় বলেছিলেন, আগামী ৫০ বছরেও রাজ্যের শাসনক্ষমতা থেকে তৃণমূলকে হটানো যাবে না। ‘সততার প্রতীক’ হয়ে রাজ্য শাসন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এক যুগ যেতে না যেতেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। মমতার সরকারের ওপর পড়েছে কালিমা। দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকে।

এই আবহেই শুরু হচ্ছে লোকসভা নির্বাচন। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে সরব বিরোধী শিবির। প্রতিদিনই দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠছে শাসক দলের নেতা-কর্মী ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন কারাগারে। কারাবন্দী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

৫৪৩ আসনের লোকসভার ৪২টি আসন পশ্চিমবঙ্গে। আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন সাত দফায় এসব আসনে ভোট গ্রহণ হবে। এখন পর্যন্ত সব আসনে শুধু তৃণমূলই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে ৩৮ আসনে। এ ছাড়া বামফ্রন্ট ২১ আসনে ও কংগ্রেস ১২ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। আইএসএফ বা ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট এখনো প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তই করতে পারেনি।

এবার পশ্চিমবঙ্গে মূলত লড়াই হবে তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির। তৃণমূল ধর্মনিরপেক্ষ হলেও দুর্নীতিতে জড়িয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে। জনমত সমীক্ষায় তৃণমূলের জনপ্রিয়তায় ভাটার টানের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। জরিপে উঠে এসেছে, ৪২ আসনের মধ্যে তৃণমূল ২৩টি আর বিজেপি ১৯টি আসন পেতে পারে। শূন্য হাতে ফিরতে হতে পারে বাম ও কংগ্রেস জোটকে। কংগ্রেস-বাম জোট অবশ্য এবার ভালো ফল করার বিষয়ে বেশ আশাবাদী। গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দুটি আসন পেলেও বাম দলগুলো কোনো আসনেই জিততে পারেনি।

দুর্নীতির কারণে তৃণমূলের জনপ্রিয়তায় এবার যেমন কমেছে, তেমনি কিছুটা হলেও জনপ্রিয়তা বেড়েছে বিজেপি এবং কংগ্রেস-বাম জোটের। তাই বাম-কংগ্রেস জোট মনে করছে, তৃণমূলের দুর্নীতির ছায়া এবার লোকসভা নির্বাচনে পড়বেই। এদিকে বিজেপি নেতা ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দলের নেতাদের বলেছেন, এবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ৩৫ আসনে জিততে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সব আসন চান। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে এসে তিনি বলেছেন, বিজেপির জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪২ আসনই। তৃণমূলও বলছে, তারা এবার রাজ্যের সব আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

এদিকে অতীত ভুলে বাম-কংগ্রেস জোট এবার ভালো ফলের আশা করছে। জোট নেতাদের দাবি, রাজ্যের মানুষ যেমন তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ, তেমনি বিজেপির ধর্মান্ধ রাজনীতি নিয়েও তারা বীতশ্রদ্ধ। ফলে এবার বহু ভোটারই তৃণমূল ও বিজেপিকে ভোট না দিয়ে তাদের ভোট দেবেন। এতে বহু আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ে জয় পেতে পারেন জোটের প্রার্থীরা।

যদিও এই যুক্তি মানছে না তৃণমূল ও বিজেপি। তৃণমূল বলছে, ভোটাররা আবার তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকতে শুরু করেছেন। মানুষ বুঝেছে, তৃণমূল এই রাজ্যে যে উন্নয়ন করেছে, তা অন্য দলগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যদিকে বিজেপি মনে করছে, তৃণমূল যেভাবে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি করেছে, তাতে রাজ্যের মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেবেন না, ভোট দেবেন বিজেপিকে। কারণ, তারা এখন বিজেপিকেই তৃণমূলের বিকল্প মনে করছে। বিজেপি বলছে, বাম ও কংগ্রেস জোটের এখন আর সেই শক্তি নেই যে তারা যৌথভাবে এই রাজ্য শাসন করতে পারবে। এটা ভাবলে সেটা হবে তাদের দুরাশা।

তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার তৃণমূলের ভোট কমবে, বাড়বে বাম-কংগ্রেস জোটের। জোটের ভোটই তৃণমূলের পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারে। আবার তৃণমূল ও বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ফাঁকে জোটের প্রার্থীও জিতে যেতে পারেন। এতে শেষ পর্যন্ত ভোটের হিসাবে হয়তো এগিয়ে থাকলেও অতীতের তুলনায় বিজেপির চেয়ে আরও পিছিয়ে পড়তে পারে মমতার তৃণমূল।