প্রমোদতরি ‘এম ভি গঙ্গা বিলাস’–এর যাত্রা শুরু, জনপ্রতি খরচ ২০ লাখ রুপি

ভারতের প্রমোদতরি ‘এম ভি গঙ্গা বিলাস’
ছবি: এএনআই

বারানসি থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসামের ডিব্রুগড় পর্যন্ত প্রমোদতরি ‘এম ভি গঙ্গা বিলাস’–এর শুভ যাত্রা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ শুক্রবার সকালে দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মধ্য দিয়ে এই প্রমোদতরির যাত্রা শুরু করে তিনি বলেন, পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। বাংলাদেশ ও ভারত—দুই দেশই এ ‘ক্রুজ’ থেকে উপকৃত হবে। বারানসি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী কেন্দ্র।

এই প্রমোদতরি বারানসি থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ হয়ে আসাম রাজ্যের ডিব্রুগড়ে পৌঁছাবে ৫১ দিনে। পাড়ি দেবে ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার। বিশ্বে নদীপথে এই যাত্রা দীর্ঘতম। এই দীর্ঘ পথে দুই দেশের মোট ২৭টি নদী পাড়ি দেবে এই বেসরকারি প্রমোদতরি ‘গঙ্গা বিলাস’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে পূর্ব ভারতের বহু পর্যটনস্থল বিশ্বের পর্যটন ম্যাপে স্থান করে নেবে। প্রধানমন্ত্রী এই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ায় ‘মাল্টি মোডাল টার্মিনাল’, গুয়াহাটিতে ‘মেরিটাইম স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ ও আসামের পান্ডুতে জাহাজ সারানো কেন্দ্র, উত্তর প্রদেশ ও বিহারে দুটি কমিউনিটি জেটি এবং আসামে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অথবা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

তিনি বলেন, এই ক্রুজ যেখান দিয়ে যাবে, সেখানকার বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা বহু গুণ বেড়ে যাবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। হবে উন্নয়ন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর গঙ্গা শুধু অবহেলিতই হয়নি, তার দুই পাশের জনগণও বঞ্চিত হয়েছে। পেটের তাগিদে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই ক্রুজ নদীপথের বিশেষত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে তাকে বিকাশের সঙ্গে যুক্ত করবে।

প্রধানমন্ত্রী সেই সঙ্গে বারানসির গঙ্গা তীরবর্তী এক ‘টেন্ট সিটি’ বা তাঁবু শহরেরও উদ্বোধন করেন। দেশ–বিদেশের ৮০০ পর্যটক থাকতে পারেন—এমন বিলাসবহুল ২৬৫টি তাঁবু গঙ্গা তীরে স্থাপন করা হয়েছে। পর্যটকেরা এই তাঁবু শহর থেকে প্রত্যহ গঙ্গা আরতি প্রত্যক্ষ করা ছাড়াও যোগ ও আধ্যাত্মিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন। এই তাঁবু শহর পুরোপুরি আমিষ খাদ্য ও মদবিবর্জিত।

এ প্রমোদতরিতে চেপে নদী বিলাসের দক্ষিণার পরিমাণ শুধু ধনীদের পক্ষেই বহন করা সম্ভব। কারণ, ক্রুজ পরিচালক রাজ সিংয়ের মতে, ৫১ দিন ভ্রমণের দরুন মাথাপিছু খরচ পড়বে প্রায় ২০ লাখ রুপি। প্রমোদতরিতে রয়েছে মোট ১৮টি বিলাসবহুল স্যুইট। প্রতিটিতে দুজনের থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে। প্রথম দিন এই ক্রুজে যাত্রাসঙ্গী হন ৩২ জন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক।

এতে রয়েছে অত্যাধুনিক স্পা, জিম, লাইব্রেরি, বিনোদনের বন্দোবস্ত এবং দেশ-বিদেশের খাওয়া। ক্রুজে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকছে, যাতে গঙ্গা দূষিত না হয়। এই ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বিদেশি পর্যটকেরা ভারত ও বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন ও আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে অবহিত হবেন বলে ভারতের কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল জানিয়েছেন।

উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এই প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছেন। টুইট করে তিনি বলেন, সারা পৃথিবীর মানুষ কাশী-বারানসিতে আসেন আধ্যাত্মিকতার সন্ধানে, বিলাসী জীবনযাপনের জন্য নয়। বিজেপি এবার কাশীর নৌচালকদের রুটি-রুজি বন্ধ করে দিতে চলেছে। জাঁকজমকপূর্ণ বিলাসের মধ্য দিয়ে দেশের সার্বিক অন্ধকার এভাবে ঢাকা দেওয়া যায় না।

প্রধানত ধনী বিদেশি পর্যটকদের জন্যই এই প্রমোদতরি। প্রধানমন্ত্রীর কথায় তারই আভাস মেলে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্ব যত বাড়ছে, ততই বেড়ে চলেছে ভারতকে জানা ও বোঝার আগ্রহ। এই ক্রুজ সেই আগ্রহ মেটাবে।

যেভাবে বিলাসী রেলপথ ‘দ্য প্যালেস অন হুইলস’ সাফল্য পেয়েছে, সেইভাবে নদীপথে এই প্রমোদতরিও ব্যবসায়িক দিক থেকে সফল হবে বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা। তবু জনমানসে প্রশ্ন উঠেছে, ৫১ দিন অতিবাহিত করার মতো সময় কতজনের রয়েছে। ২০ লাখ রুপি খরচের ক্ষমতাও বা আছে কতজনের।