ভারতের রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে সোনিয়া গান্ধী
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দুই দিন আগে গত বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘সত্যি এটাই যে দশ-পনেরো বছর ধরে দলিত ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনে কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে। সেই সুযোগে দেশে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) জাঁকিয়ে বসেছে। অথচ ইন্দিরা গান্ধী এসব মানুষেরই নয়নের মণি ছিলেন।’
রাহুলের এই সত্যকথনের ঠিক পরদিন গতকাল শুক্রবার ভারতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণ নিয়ে সোনিয়া গান্ধীর মন্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপিই শুধু সেই মন্তব্যকে হাতিয়ার করেনি, নজিরবিহীনভাবে রাষ্ট্রপতি ভবনও বিবৃতি দিয়েছে। সোনিয়ার নাম না করে তাতে বলা হয়েছে, কংগ্রেস নেতা–নেত্রীদের মন্তব্য রাষ্ট্রপতির মর্যাদায় আঘাত করেছে, যা মানা যায় না।
এই সমালোচনা ও আক্রমণের মুখে কংগ্রেসের যুক্তি, সোনিয়ার মন্তব্য বিকৃত করে বিজেপি তিলকে তাল করছে।
ভারতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয় দুই কক্ষের সদস্যদের জমায়েতে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দিয়ে। দীর্ঘক্ষণ ধরে ভাষণ দেওয়ার সময় রাষ্ট্রপতিকে দৃশ্যত ক্লান্ত লাগছিল। ভাষণের পর সোনিয়া, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা সংসদ ভবন চত্বরে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। তাঁদের ঘিরে ছিলেন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা।
রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সোনিয়া প্রথমে বলেন, ‘মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, ‘বিরক্তিকর (বোরিং)? কোনো মন্তব্য নয়।’ সে সময় সোনিয়া বলেন, ‘শেষের দিকে রাষ্ট্রপতিকে ক্লান্ত লাগছিল। বেচারা।’
রাহুল জানতে চান, ‘একই কথার পুনরাবৃত্তি?’ সোনিয়া বলেন, ‘উনি কথা বলতে পারছিলেন না। পুওর থিং (খারাপ লাগছিল)।’
গণমাধ্যমে এই মন্তব্য প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি আসরে নেমে পড়ে। দলের সভাপতি জে পি নাড্ডা বলেন, ‘সোনিয়া দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে আসীন, যিনি রাষ্ট্রপতিকে অপমান করেছেন। দলিত নারীর ক্ষমতায়নকে ব্যঙ্গ করেছেন।’
দিল্লিতে ভোটের প্রচারে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, কংগ্রেসের শাহি পরিবার দেশের ১০ কোটি আদিবাসীকে অপমান করেছেন। একজন তাঁর ভাষণকে ‘বোরিং’ বলেছেন, অন্যজন বলেছেন ‘পুওর থিং’।
সময় নষ্ট না করে গতকাল শুক্রবার বিকেলেই রাষ্ট্রপতি ভবনও নজিরবিহীনভাবে একটি বিবৃতি দেয়। তাতে সোনিয়া বা অন্য কারও নাম না করে বলা হয়, ‘ওই সব মন্তব্য রাষ্ট্রপতি পদের মর্যাদায় আঘাত করেছে। রাষ্ট্রপতি ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন, কথা বলতে পারছিলেন না, একেবারেই ঠিক নয়। হতে পারে এসব নেতা হিন্দি ভাষার অনুষঙ্গের সঙ্গে পরিচিত নন, তাই ভুল ধারণা তৈরি হয়। কারণ যাই হোক, এ ধরনের মন্তব্য অনভিপ্রেত ও দুর্ভাগ্যজনক।’
কংগ্রেস অবশ্য পাল্টা আক্রমণ করেছে। সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে না ডেকে মোদি সরকারই রাষ্ট্রপতিকে অপমান ও অসম্মান করেছিল। তারা অনর্থক বিতর্ক সৃষ্টি করছে আর্থিক সমীক্ষায় অর্থনীতির দুর্দশার যে ছবি ফুটে উঠেছে, তা থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরাতে।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, মন্তব্য বিকৃত করার জন্য বিজেপির উচিত গান্ধী পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের বয়সও ৮০ হতে চলেছে। রাষ্ট্রপতিকে তিনি খুবই সম্মান করেন। উনি শুধু বলেছেন, এত দীর্ঘ ভাষণ পাঠ করতে গিয়ে তিনি নিশ্চয় ক্লান্ত বোধ করেছেন। সেটা খারাপ। বিজেপি যেভাবে তাঁর মন্তব্য বিকৃত করেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক।’
বিতর্ক কত দূর গড়াবে ভিন্ন প্রশ্ন। অতীতের ভুল স্বীকার করে দলিত, আদিবাসী ও অনগ্রসরদের কাছে টানতে রাহুল সম্প্রতি যে উদ্যোগ নিয়েছেন, এই বিতর্ক তাতে ধাক্কা দেবে কি? কংগ্রেস মহলেই তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।