মিজোরামেও সহিংসতার ঝুঁকিতে মণিপুরের মেইতি সম্প্রদায়ের লোকজন

মণিপুরে নারীদের প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভ
ছবি: এএফপি ফাইল ছবি

মিজোরামে অবস্থানরত মেইতি সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের মণিপুরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মিজোরামের একটি নাগরিক সংগঠনের সতর্কতার পর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত অন্তত ৬৫ জন মেইতেই মিজোরাম ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।

গত শুক্রবার রাতে মিজোরামের অবসরপ্রাপ্ত জঙ্গিদের নাগরিক সংগঠন পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিস অ্যাসোসিয়েশন (পামরা) একটি বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, মিজোরাম আর মেইতি জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ নয়। পরে অবশ্য তারা এ বিবৃতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে।

পামরার বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্বৃত্তদের দ্বারা সংঘটিত বর্বর এবং জঘন্য কর্মকাণ্ডের পর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে মিজোরাম মেইতিদের জন্য আর নিরাপদ নয়। মনে করা হচ্ছে, বর্তমানে দুই হাজারের বেশি মেইতি মিজোরামে অবস্থান করছেন।

এই বিবৃতির পর মিজোরাম সরকারের প্রতিনিধিরা সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাঁরা জানান, ওই বিবৃতির মাধ্যমে মেইতিদের মিজোরামে সাবধানতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হয়েছে। কোনো হুমকি দেওয়া হয়নি।

এদিকে মণিপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার যে খুব সক্রিয়ভাবে মণিপুরের বাসিন্দাদের ফেরানোর চেষ্টা করছে, তা নয়। তবে আমরা পরিস্থিতির ওপর স্বাভাবিকভাবেই নজর রাখছি। প্রয়োজনে তাঁদের বিমানে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে। মণিপুর সরকারের সঙ্গে মিজোরাম সরকারের কথা হয়েছে। আমরা মিজোরাম সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রাখছি।’

মিজোরাম সরকারের পক্ষ থেকেও মেইতিদের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলা হয়েছে, তাঁদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার পূর্ণ দায়িত্ব মিজোরাম সরকারের। এ দায়িত্ব পালনে মিজোরাম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু এরপরও সাধারণ মানুষ যে সরকারের প্রতিশ্রুতিতে ভরসা রাখতে পারছেন না, তা স্পষ্ট।

ভারতের সংবাদপত্র টাইমস অব ইন্ডিয়া মিজোরামের আইজল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, শনিবার অন্তত ৬৫ জন আইজল থেকে মণিপুরের রাজধানী ইমফলের বিমান ধরেছেন। তাঁদের অধিকাংশই আইজলে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

মে মাসের শুরুতে মণিপুরে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর কুকি-চিন ও জো সমাজের সাড়ে ১২ হাজারের বেশি মানুষ মণিপুর থেকে মিজোরামে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। মণিপুরে মেইতি সম্প্রদায়ের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন কুকি-চিনসহ ২০টির বেশি জনজাতির মানুষ। তাই মিজোরামের সাবেক জঙ্গিগোষ্ঠীর থেকে আসা হুমকিকে স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন মিজোরামে বসবাসকারী মণিপুরের মেইতিরা, যাঁরা কোনোভাবেই সাম্প্রতিক সংঘাতে লিপ্ত নন।

বিজেপি শাসিত মণিপুরে সহিসংতার ১০ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। অগুনতি ঘরবাড়ি, গির্জা, মন্দির ধূলিসাৎ হয়েছে। ৬০ হাজার মণিপুরি এখনো শরণার্থীশিবিরে বন্দী।